Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য নবীজির সুসংবাদ

Icon

আহমদ মাসুদ

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য নবীজির সুসংবাদ

কিয়ামতের দিন, মহান আল্লাহর আরশের ছায়ায় জায়গা লাভকারী সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হবেন সেই ব্যবসায়ীরা, যারা তাদের ব্যবসায় সততা, সত্যবাদিতা এবং আমানতকে অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিয়েছে। সত্য বলার কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি হবে কি না এ ব্যাপারে তারা কখনো চিন্তা করেনি। বরং তাদের দৃষ্টি সর্বদা আখিরাতের দিকে নিবদ্ধ থাকে। সব সময় তারা সচেতন থাকেন, যেন ধোঁকা, প্রতারণা ও মিথ্যার কারণে তাদের রব রাগান্বিত না হন। তাই তারা ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা ও আমানতদারিতার পরিচয় দেন।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে থাকবে’। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব-৭৯৫।) কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। সূর্য থাকবে মাথার একেবারে কাছে, ফলে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ চরম দুশ্চিন্তায় ও কষ্টে থাকবে এবং ছায়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবে। কিন্তু আল্লাহর কতিপয় কাছের বান্দা থাকবেন, যারা এই প্রচণ্ড রোদের তাপ থেকে আরশের ছায়ায় রক্ষা পাবেন। এদের মধ্যে একজন হবেন সেই ব্যবসায়ী, যিনি সম্পূর্ণ সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেন।

বর্তমানে মানুষের মনমানসে দুনিয়া ও সম্পদের প্রেম এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে যে, সত্যনিষ্ঠভাবে ব্যবসা করাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী কিছু না কিছু মিথ্যা বলেই থাকেন, যাতে পণ্য বিক্রি সহজ হয়। যেমন-‘এই জিনিস আপনি আর কোথাও পাবেন না’, ‘আমরা আপনার কাছ থেকে লাভ নিচ্ছি না’ এসব কথাবার্তা বলা হয়, যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। ওই জিনিস অন্য দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে এবং বিক্রেতা লাভও নিচ্ছেন।

মিথ্যা হলো এমন একটি গুনাহ, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের ধ্বংসের কারণ হয়। যখন একজন ব্যবসায়ী মিথ্যার আশ্রয় নেন, তখন তা শুধু একটি বাক্য নয় বরং এটি হয় একটা বিশ্বাসঘাতকতা, একটা প্রতারণা, একটা পাপ এবং মহান আমানতের খেয়ানতও বটে। ইসলামের দৃষ্টিতে মিথ্যা বলা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং একটি মারাত্মক অপরাধ। রাসূল (সা.) বলেন-‘তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে থাকবে, সে হবে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকির একটি গুণ থাকবে যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। ১. যখন কিছু বলে তখন মিথ্যা বলে; ২. যখন ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে; ৩. যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন সে তাতে খেয়ানত করে’। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম।)

এ হাদিসের আলোকে দেখা যায়, মিথ্যা বলা একজন ব্যক্তিকে শুধু পাপী বানায় না; বরং তাকে মুমিনের কাতার থেকে নিয়ে মুনাফিকের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়। আর মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে, এটা আল্লাহর ঘোষিত কঠিন শাস্তি। মিথ্যার কারণে ব্যবসার মধ্যে যেমন বরকত নষ্ট হয়, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার সুনাম ও গ্রাহকদের আস্থাও হারিয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় মিথ্যা কথার মাধ্যমে সাময়িক লাভ হলেও পরে গ্রাহক আর ফিরে আসে না। ফলে চরিত্রগত ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক ক্ষতি চেপে বসে। এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি বিক্রি করার সময় মিথ্যা কসম খায়, আল্লাহ তার ব্যবসার বরকত নষ্ট করে দেন।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম।)

মিথ্যা বলার কারণে ব্যবসা থেকে যে বরকত চলে যায়, তা হয়তো টাকার অঙ্কে বোঝা যায় না, কিন্তু যাপিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে। সন্তানের অশান্তি, সংসারের টানাপোড়েন, আত্মিক অস্থিরতা ও আল্লাহর কাছ থেকে দূরত্ব এগুলোর মধ্য দিয়েই তার প্রকাশ ঘটে। তদুপরি, কিয়ামতের দিন এক ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যেক মিথ্যাবাদী ব্যবসায়ীর জন্য অপেক্ষা করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেদিন তাদের সম্পদ বা ধোঁকাবাজি কোনো কাজে আসবে না। বরং ওরা বলবে, ‘হায়! যদি আমি সততার সঙ্গে চলতাম, তাহলে আজ এমন দুর্দিন দেখতে হতো না’। সুতরাং, ব্যবসায় মিথ্যা বলে সাময়িক লাভ করার চেয়ে সত্যনিষ্ঠতা ও আমানতদারিতা রক্ষা করে দীর্ঘমেয়াদে বরকতময় ও নিরাপদ জীবন গঠন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। একজন সৎ ব্যবসায়ী কেবল দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হবে এটাই ইসলামের সুসংবাদ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম