Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

নবী প্রেমের সুবাসে ভরা রবিউল আউয়াল

Icon

রেহানা ফেরদৌসী

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নবী প্রেমের সুবাসে ভরা রবিউল আউয়াল

হিজরি সালের তৃতীয় মাস হলো রবিউল আউয়াল। ‘রবি’ অর্থ বসন্তকাল, ‘আউয়াল’ অর্থ প্রথম; ‘রবিউল আউয়াল’ মানে প্রথম বসন্ত বা বসন্তকালের প্রথম মাস। রবিউল আউয়াল ইসলামের বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস। এ মাসে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মদিন পালন করা হয়।

এ মাসটির নাম ‘রবিউল আউয়াল’ হওয়ার কারণ হচ্ছে, প্রাক-ইসলামি আরব পঞ্জিকা অনুসারে এটি ছিল প্রথম মাস। ইসলাম ধর্মীয় মতানুসারে, এটি একটি শুভ মাস।

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর বহুমাত্রিক স্মৃতিধন্য এ মাস, মানবসভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুসলিম মানসে এ মাস শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মহিমায় পরিপূর্ণ। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। ‘তিনি সেই মহান সত্তা যিনি পাঠিয়েছেন তার দূত হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ সে ধর্মকে সব ধর্মের ওপর বিজয়ী করার জন্য। সাক্ষ্যদাতা রূপে আল্লাহই যথেষ্ট’।

রিসালাতের উদ্দেশ্য, সফলতা ও পরিপূর্ণতার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ইসলামি ধর্মরাষ্ট্র তথা সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা যে হিজরত, তা সংঘটিত হয়েছিল এ মাসেই। এ মাসের ১২ তারিখেই আখেরি নবীর ওফাত হয়েছিল। রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে, সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে দিয়ে ইসলামের সাম্য ও ন্যায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা।

আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে, যখন পৃথিবী ডুবন্ত ছিল অন্ধকারের সমুদ্রে, আত্মিকতা পরাজিত হয়ে চলেছিল শয়তানতন্ত্রের কাছে, তখন মহান সৃষ্টিকর্তা তার শেষ নবী এবং প্রিয়তম রাসূল হজরত মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা.)কে এ পৃথিবীতে পাঠালেন, যেন তিনি হেদায়েতের জ্যোতি দিয়ে, গুমরাহির অন্ধকার ছিন্ন করে দেন এবং মিথ্যার ওপর সত্যকে বিজয়ী করে দেন। তিনি তাশরিফ আনলেন। তিনি আল্লাহর সিদ্ধান্তে পৃথিবীর রূপ পালটে দিলেন।

বিশ্বনবী যে মাসে জন্মগ্রহণ করেন, সেটি ছিল রবিউল আউয়াল মাস এবং যখন তার বয়স চল্লিশ বছর পূর্ণ হলো তখন এ মাসেই তাকে সোপর্দ করা হয়েছিল জগৎ শুদ্ধির কাজ। সুতরাং এ হিসাবে বলা যেতে পারে, রবিউল আউয়াল এই সর্বজনীন রহমত বিকাশের শুরুক্ষণ এবং এ আত্মিক কল্যাণ ও সুষমার ঝরনাধারার উৎসমুখ। আর এ কারণেই যখন এ মাসটি আসে তখন মুসলমানদের হৃদয়ে সেই মহান অস্তিত্বের স্মরণ সজীব হয়ে ওঠে।

রবিউল আউয়াল মাসটি মুসলিম সমাজে নবী করিম (সা.)-এর জন্মেরও স্মারক হিসাবে পালিত হয়, যা ‘ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম’ নামে পরিচিত। ‘ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম’ কথাটি ফারসি ভাষা থেকে আগত। দোয়াজ-দাহম মানে ১২, ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম অর্থ হলো ১২ তারিখের ফাতিহা অনুষ্ঠান। কালক্রমে দিনটি ‘মিলাদুন্নবী (সা.) নামে প্রসিদ্ধ লাভ করে। এর অর্থ হলো প্রিয় নবী (সা.)-এর জন্মানুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রূপ লাভ করে। যার অর্থ হলো মহানবী (সা.)-এর জন্মোৎসব। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন নবী (সা.) অর্থাৎ নবী (সা.)-এর জীবন চরিত্র বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান।

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মতারিখ নিয়ে সিরাত গ্রন্থ, জীবনীকার, ইতিহাসবিদ ও জ্যোতির্বিদদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে প্রায় সবাই এ বিষয়ে একমত যে, তার জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার প্রত্যুষে বা ভোরবেলায় তথা ঊষালগ্নে। প্রসিদ্ধ মতে, সেদিন ছিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল (১২ রবিউল আউয়াল)। এবং তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ দ্বিতীয় সোমবার অহরাহ্ন বা গোধূলিলগ্নে। তার ওফাত ১২ রবিউল আউয়াল হিসাবে প্রসিদ্ধ লাভ করে। প্রিয় নবী (সা.)- এর আগমন ও প্রস্থান একই দিনে, একই সময় এ কথাই সর্বজনবিদিত।

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা। নবী-রাসূল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাই আল্লাহকে পেতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) যা, যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা, ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসূল (সা.), তা তোমরা ধারণ করো; আর যা থেকে তিনি বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সূরা হাশর, আয়াত : ৭।)

আরও বলা হয়েছে, ‘বলুন হে রাসূল (সা.) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১।) হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হব তার নিকট তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছু থেকে প্রিয়’। (বুখারি, প্রথম খণ্ড: হাদিস : ১৩ ও ১৪।)

রবিউল আউয়াল মাস আত্মিক উন্নয়ন ও নবীজির আদর্শ চর্চার মাস। এ মাসে নিজেকে নবীর সুন্নাহর আলোকে গড়ে তুলতে হবে। রবিউল আউয়ালের আগমনে বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় নবীজির সব উম্মতের হৃদয় সিক্ত হোক। তার দেখানো পথে হেদায়েত মিলুক। এ পবিত্র মাসে রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথে চলতে ও তার আদর্শ ধারণ করতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। সবাইকে রবিউল আউয়ালের শুভেচ্ছা।

লেখক : সহ-সম্পাদক, সমাজকল্যাণ বিভাগ, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম