নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন
ইহুদি-মুসলিম সবার হৃদয়ে মামদানি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৩ পিএম
জোহরান মামদানি। সাম্প্রতিক ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। নিউইয়র্কে এই প্রথম মুসলিম মেয়র হলেন মামদানি। মামদানি কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নয় বরং শহরের সব সম্প্রদায়ের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার নীতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব এবং যুবসমাজের সঙ্গে সংযোগ কেবল ভোটারদের সমর্থন নয় বরং গভীর আস্থা এবং শ্রদ্ধাও জাগিয়েছে। ইহুদি থেকে মুসলিম- বর্ণ, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সীমারেখা অতিক্রম করে মামদানি নিউইয়র্কের মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। রয়টার্স, মিডল ইস্ট আই।
নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার পাশাপাশি শহরের ইতিহাসে প্রথম
দক্ষিণ এশীয় ও গত এক শতকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি মেয়র মামদানি। মেয়র পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরুর সময় তিনি ছিলেন তুলনামূলক অচেনা রাজনীতিক। কিন্তু শহরের বসবাসযোগ্যতা
নিয়ে তার স্পষ্ট বার্তা ও প্রাণবন্ত প্রচারে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মামদানি। তার
ঘোষিত কর্মসূচিতে ছিল বাড়ি ভাড়া স্থির রাখা, সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ, ন্যূনতম মজুরি
ঘণ্টায় ৩০ ডলার করা, বাস পরিবহনসেবা ফ্রি করা, ধনীদের ওপর কর বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ।
মামদানিকে নিয়মিতভাবে ইহুদিবিদ্বেষী হিসাবে উপস্থাপন করা হলেও, ইহুদিদের ব্যাপক সমর্থন
পান এই মেয়র। এমনকি তার পক্ষে প্রচারের জন্য ইহুদি সমর্থকদের একটি অংশ ‘জিউশ ফর জোহরান’ নামে একটি সংগঠনও
গড়ে তোলে। ব্যক্তিপর্যায়ের সমর্থক ছাড়াও এই সংগঠনে আছেন জিউশ ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক
জাস্টিস, জিউশ ভয়েস ফর পিসসহ বিভিন্ন ইহুদি সংগঠনের সমর্থকরাও। সংগঠনটি নিজেদের সম্প্রদায়ের
পাশাপাশি নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রচার চালিয়েছে। যেসব ইহুদি মামদানিকে
সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন জ্যাকব ব্লুমফিল্ড মিডল ইস্ট আইকে
বলেছেন, সমাজের সবারই বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহণ, পুষ্টিকর খাবার ও নিরাপত্তার
মতো মৌলিক অধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু স্থিতিশীল জীবনের জন্য এই উপাদানগুলো এখন অনেকের
নাগালের বাইরে।
ব্লুমফিল্ড আরও বলেন, ‘এমনকি ৩০ বছর আগে যাদের মধ্যবিত্ত ধরা হতো, তারাও
আজ টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন। যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। জোহরান একমাত্র প্রার্থী,
যিনি এ পরিস্থিতির গভীরতা ও করুণ বাস্তবতা নিয়ে সত্যিই ভাবছেন।’ মামদানিকে সমর্থন
দিয়েছেন অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী ম্যাট কেটাইও। নির্বাচনি প্রচারেও নিয়মিত অংশ নিয়েছিলেন
তিনি। ম্যাট বলেন, ‘আমি জোহরানের ব্যক্তিত্বে বিশ্বাস করি। আমি তার নীতিগুলোকে ভালোবাসি,
তার ভাবনাকে ভালোবাসি। তিনি প্রাণবন্ত ও উদ্যমী। তিনি সত্যিই নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন
এবং এই শহরকে আরও ভালো জায়গায় পরিণত করতে চান। অন্য কোনো রাজনীতিকের মধ্যে আমি এটা
দেখি না।’
এদিকে মামদানিকে সমর্থন দেওয়া ইহুদিদের ‘স্টুপিড’ বলেছেন মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে তিনি লেখেন, নিউইয়র্কের
মেয়র নির্বাচনে যেসব ইহুদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মামদানিকে ভোট দিয়েছেন তারা মূলত বোকা
এবং ইহুদিবিদ্বেষী। তাদের এমন পদক্ষেপ মার্কিন ইহুদিদের বিরুদ্ধে যাবে। এর আগে মামদানির
পরিবর্তে আরেক অ্যান্ড্র– কুমোকে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক শহরের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধের ঘোষণা
দেবেন বলেও হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার
পর প্রথম বড় মার্কিন নির্বাচন এটি। তার মতো কট্টর ডানপন্থি নেতার শাসনামলে একজন মুসলিমের
নিউইয়র্ক সিটির মতো এলাকায় নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার ঘটনা দেশটির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা
যোগ করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
