চুরির অপবাদে যুবককে গাছে বেঁধে পেট্রল ঢেলে আগুন দিল প্রতিপক্ষ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১০:১১ পিএম

আহত জাহেদ মিয়া
হবিগঞ্জের বাহুবলে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে জাহেদ মিয়া নামে এক যুবককে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের পর আবার গাছের সঙ্গে বেঁধে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঝলসে গেছে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ। উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ১৩ জনের নামে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাহেদ আলীর আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় আমির আলী (৬০) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে জেলে পাঠাতে পেরে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে জানান নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া।
তার ভাষায়, আমাদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে আমির আলীর বিরোধ রয়েছে। মামলা মোকদ্দমাও রয়েছে। ২০২০ সালে একটি মারামারির ঘটনায় মামলা দিয়ে আমার বাবার ১৮ মাসের সাজা করিয়ে নেয় আমির আলী। ১ মাস ১৯ দিন জেল খাটার পর বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) আমার বাবা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আমির আলী গ্রেফতার হয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা মামলা করেছে। আমরাও মামলা করেছি। কোর্টে মামলা করি। থানায় তদন্ত করতে দেয়। কিন্তু আমির আলী টাকা দিয়ে আটকে দেয়। তদন্ত রিপোর্ট তার পক্ষে নিয়ে নেয়। আমরা কখনো তাকে জেল খাটাতে পারিনি। তার প্রচুর টাকা আছে। পুলিশকে টাকা দিয়ে মামলা তার পক্ষে নিয়ে নেয়। আমাদের গরু ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। তাও আমরা কিছু করতে পারিনি। তার টাকার জোরের কাছে আমরা বার বার হেরে যাই। এখন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
দগ্ধ জাহেদ মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সোহেল মিয়ার ২টি মোবাইল ফোন চুরি হয়। ৯ মার্চ রাতে আব্দুল ওয়াদুদ মোবাইলে চোর ধরা পড়েছে বলে আমাকে যমুনাবাদ যেতে বলেন। আমাদের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামে। যমুনাবাদ আমাদের পাশে, মাত্র ২ মিনিটের পথ। আমিও যাই। চোর দেখার আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তারা আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায়। অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর সঙ্গে সহায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছে তার প্রতিবেশী আমির আলীর। তাদের মধ্যে একাধিক মামলা মোকদ্দমাও রয়েছে। ২০২০ সালের একটি মারামারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন ইউসুফ আলী। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে গত ৮ মার্চ বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামের সোহেল মিয়ার ২টি মোবাইল ফোন চুরি হয়। ৯ মার্চ ইউসুফ আলীর ছেলে দর্জি শ্রমিক জাহেদ মিয়াকে ডেকে যমুনাবাদ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর পর গাছে বেঁধে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জাহেদ মিয়া বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী কুতুব উদ্দিন জুয়েল বলেন, বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাহেদ আলীর আদালতে এ ঘটনায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি এফআইআর করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাহুবল মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ধরণের মব জাস্টিস বন্ধে আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, ন্যায়বিচার পাব।
বাহুবল থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জানান, শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আদালতে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমির আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান জানান, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

