Logo
Logo
×

খেলা

বাফুফের টনক নড়বে কবে?

আরকে রাডার

আরকে রাডার

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৩১ এএম

বাফুফের টনক নড়বে কবে?

কোচিংয়ে দল নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন কাবরেরা— সংগৃহীত ছবি

(প্রথম দ্বিতীয় পর্ব-এর পর)

বাফুফের এই আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন না দেখে বাস্তবে ফিরে আসার বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে নির্মূল করুন। তা না হলে এই ফুটবল গণজোয়ারে স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় ভাটায় পরিণত হবে। আর যখন স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো একটা সময় হতাশায় ভুগতে থাকবে, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে, তখন লুটপাটের রাজনীতি করা দোসর কর্মকর্তারা কাবরেরাকে ছুড়ে ফেলে দেবে ঠিকই, কিন্তু ততদিনে সব শেষ হয়ে যাবে। 

যে আশায় আমরা বুক বেঁধে আছি, সেই দোসরদের কবলে পড়ে তা ধূলিসাৎ হবে। হংকং ম্যাচে পরাজিত হলেই দোসররা মুচকি হাসি দেবে। আপনি সভাপতি হিসেবে বুঝবেন, কোচ কাবরেরাকে বিদায় করবেন; কিন্তু মনোকষ্টে কোনো কিছুই বলার থাকবে না। সে জন্য চাই দোসরমুক্ত ফেডারেশন। চাই হ্যাভিয়ের কাবরেরাসহ পুরো কোচিং প্যানেল বদল।

একবার ভাবুন তো? বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহ ছিল আকাশচুম্বী। চলছিল ফুটবলের গণজোয়ার। যেটি কিনা গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ফুটবলে মিসিং ছিল। টালমাটাল ক্রিকেটের নাজুক অবস্থায় দেশের ফুটবলে টার্নিং পয়েন্ট। এমতাবস্থায় ফুটবলের ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্রিকেটকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু দোসরমুক্ত ফুটবল চোখে পড়ছে না। ফুটবলের এই গণজোয়ারে নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে। আর তার কারণ একটাই—সিন্ডিকেট। সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে চলছে তুমুল বাগযুদ্ধ। বাফুফের কর্তাদের একাংশের টনক নড়লেও অপর অংশের কোনো টনক নড়ছে না। এই সিন্ডিকেটের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে ফুটবল।

ম্যাচ টাইম পাচ্ছেন না জামাল, তা নিয়েও বিস্তর সমালোচনা— ছবি: বাফুফে

সিঙ্গাপুর ম্যাচ হেরে হতাশ হলেও আশা ছাড়িনি। কিন্তু এভাবে কতদিন? কথা উঠছে—এখনই কোচকে বিদায়ের ভাবনা নেই বাফুফের। কিন্তু কেন? যেখানে দল শক্তিশালী হয়েছে, সেখানে রেজাল্ট— সেই ১৫ বছর আগের মতো। তাহলে কোচকে বিদায় নয় কেন? কার ইন্ধনে বাফুফে চলছে—দোসরদের? ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্তা সাখাওয়াত হোসেনের মন্তব্যকে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, বিষয়টি আনুষ্ঠানিক নয় মোটেও। কিন্তু কেন? জনগণ তাকে সেবক হিসেবে পাঠিয়েছেন, কোনো সিন্ডিকেটের দালাল হিসেবে নয়; উনি যা বলেছেন, সেবক হিসেবে দায়িত্ব থেকে বলেছেন এবং সঠিক সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

সিন্ডিকেটের যাঁতাকলে ফুটবল (দ্বিতীয় পর্ব)

সিন্ডিকেটের যাঁতাকলে ফুটবল

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা বলেছিলেন, যদি আমি ভুল না করে থাকি, তাহলে আমার চুক্তি ৩০ এপ্রিল ২০২৬ পর্যন্ত, তাই না? তবে কি এটাই কারণ? তিনি তার জায়গা নিয়ে নিশ্চিন্তই ছিলেন তখন পর্যন্ত। তবে স্প্যানিশ কোচের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্যের মানেই হচ্ছে— এ মুহূর্তে এ নিয়ে কথা বলা অবান্তর। কিন্তু সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর দৃশ্যপট পালটে গেছে। ২-১-এ পরাজয়ে বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে গেছে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর হয়তো সুযোগ আছে, কিন্তু যদি হংকং ম্যাচে আমরা ফল না পাই, তবে সব সর্বনাশ হয়ে যাবে। এতে কাবরেরার কোনো কিছুই যায় আসে না, যা আসার বাংলাদেশ ফুটবলের আসবে। 

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ থাকার কারণে দেশেই ঈদ কাটান হামজা-সামিতরা— ছবি: বাফুুফে

এখন হিসাব কষা হচ্ছে হংকং ম্যাচ নিয়ে। কিন্তু হ্যাভিয়ের কাবরেরা নেই। সিঙ্গাপুর ম্যাচ শেষে দেশে চলে গেছেন তিনি। খেলা শেষ হলেই উড়াল দেন নিজ দেশে। যে কোনো অজুহাতে বাড়ি যেতে দ্বিধা করেন না এ স্প্যানিশ কোচ। কারণে-অকারণে দেশে উড়াল দেওয়ায় কোচিংয়ে মনোযোগ দিতে পারেন না। এ সিদ্ধান্তের জন্যও সমালোচিত তিনি। 

বাফুফের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিনের শেষ মেয়াদে ২০২২ সালে কাবরেরার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। ওই বছর তার অধীনে আট ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। পরের বছর কিছুটা ভালো করলেও ২০২৪ সালে আট ম্যাচের ছয়টিতেই হেরেছে লাল-সবুজের দল। বাংলাদেশ জাতীয় দলে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করা বিদেশি কোচ তিনি। অথচ কাবরেরার দল নির্বাচন এবং খেলোয়াড়দের পজিশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তার অধীনে দল নির্বাচন থেকে ম্যাচ কৌশল— সবকিছুই সমালোচিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর প্রশ্ন ওঠে— একই ভুল কেন বারবার হয়? তাই সংবাদ সম্মেলনে কোচের পদত্যাগ চেয়ে বসেন খোদ বাফুফের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন— আমাদের রেজাল্ট না আসার পেছনে প্রধান কারণ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তিনি হামজাকে এখনো প্রোপারভাবে ইউটিলাইজ করতে পারেননি।

হ্যাভিয়ের কাবরেরা বলেছিলেন, যদি আমি ভুল না করে থাকি, তাহলে আমার চুক্তি ৩০ এপ্রিল ২০২৬ পর্যন্ত, তাই না? তবে কি এটাই কারণ? তিনি তার জায়গা নিয়ে নিশ্চিন্তই ছিলেন তখন পর্যন্ত। তবে স্প্যানিশ কোচের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্যের মানেই হচ্ছে— এ মুহূর্তে এ নিয়ে কথা বলা অবান্তর।

আমরাও সে কথা বলতে চাই— কোচ কাবরেরাসহ পুরো কোচিং প্যানেলকে বরখাস্ত করে নতুন কাউকে প্রধান কোচ করে আলফাজ আহমেদ, সাব্বির আহমেদ, এমিলিসহ আরও অন্য কাউকে কোচিং প্যানেলে যুক্ত করে দলকে নতুনরূপে সাজানো হোক। পুরোনো কোচিং স্টাফ বদলে নতুন প্যানেল গঠন করা হোক।

সেই সঙ্গে আরও একটি কথা— গত ৫০ বছরে অনেক কোচ এসেছে বাংলাদেশে। কেউ খারাপ নয়; সবাই ভালো। কিন্তু আমরা সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। সে কারণে আমাদের ফুটবল তলানিতে গেছে। সুতরাং পুরোনো কাউকে এনে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবেন না। কারণ তারা এসে সেই পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে হাত মেলাবে, আবারও ষড়যন্ত্র হবে। এমন ঘটনাই ঘটেছে ক্রিকেটে। গত বছরই জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেট কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বিদায় করেছে ক্রিকেট বোর্ড। দ্বিতীয়বারের মতো এসেছিলেন তিনি। হাথুরু আসার পরই ক্রিকেটে দ্বন্দ্ব চরম রূপ নেয়। সাকিব-তামিম প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলে। শেষ পর্যন্ত দুজনই জাতীয় দল থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা থাকলে হয়তো আজ ক্রিকেট দলের এ দৈন্যদশা হতো না। 

ফাহামেদুল-তারিকের সঙ্গে প্রধান কোচ কাবরেরা— ছবি: বাফুফে

যাই হোক, আমি ক্রিকেট নিয়ে কথা বলছি না, বলছি ফুটবল নিয়ে। আর ফুটবলের অভিভাবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি— যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের মধ্য দিয়ে চলছে দেশ। তাই পুরো কোচিং প্যানেলকে সংস্কার করুন। আর সংস্কারের অর্থই হচ্ছে— পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে ঢেলে সাজানো। পাওয়ার হাউস ফুটবল খেলে এমন দেশ থেকে কাউকে নিয়ে আসুন। যেমন জার্মান-ক্রোয়েশিয়া থেকে কোচ নিয়ে আসুন। সেই কোচের চোখে যারা সেরা, তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করবেন। যারা অযোগ্য তারা ঝরে পড়বেন।—এখানে আপনার-আমার কারওই কোনো কথা হবে না। 

আপনি একবার ভাবুন তো—ডিজিটাল যুগে ক্লাব বিশ্বকাপে ২৯ বছর বয়সে কোচ। আমি কেন পুরোনো কোচকে ফিরিয়ে আনব। আমাদের ডিজিটাল চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোতে হবে। যদি এমন কিছু করা না হয়, তবে সবকিছুই হবে; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফুটবলে ভালো ফল আসবে না।

  • আমরা শুধু এশিয়া নয়; বিশ্বমঞ্চে ফুটবল খেলব। সে জন্য হংকং ম্যাচের আগে দ্রুতই পুরো কোচিং প্যানেলকে ফেলে দিয়ে নতুন করে গঠন করা হোক।

আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি— আগামী ২০৩০ সালেই ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে তুলে ধরব। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দ্রুতই আমরা প্রবাসী ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়ে বাংলাদেশ দলকে আরও শক্তিশালী করে বিশ্ব ফুটবলমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াব। আমরা শুধু এশিয়া নয়; বিশ্বমঞ্চে ফুটবল খেলব। সে জন্য হংকং ম্যাচের আগে দ্রুতই পুরো কোচিং প্যানেলকে ফেলে দিয়ে নতুন করে গঠন করা হোক।—এ প্রত্যাশা আমার এবং আমাদের ১৮ কোটি মানুষের।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম