বাফুফেতে দোসরদের সিন্ডিকেট এখনো অপ্রতিরোধ্য— ছবি: বাফুফে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
(প্রথম পর্বের পর...)
কারণ আপনার পেছনে এখনো আওয়ামী দোসররা রয়েছে। তাদের মিষ্টি কথায় আপনাকে ভুলিয়ে আপনার মন জয় করে নেওয়ার চেষ্টা, কিন্তু পেছনে ফুটবলের লাগাম টেনে ধরে আপনার অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করাই হচ্ছে তাদের আসল কাজ।
ভুলে গেলে চলবে না—আমরা বাঙালি জাতি। আমরা আবেগে ভেসে যাই। কিন্তু বাস্তবতাকে ভুলে যাই। এটুকু আমাদের ভাবতে হবে। আবেগের বাঙালি হামজাকে পেয়েই সবকিছু ভুলতে বসেছি— ফুটবলপ্রেমী থেকে শুরু করে ১৮ কোটি মানুষ।
এক হামজা, শমিত সোম আর ফাহামেদুলকে দিয়েই আমরা বিশ্ব জয় করে ফেলব— এমন ধারণা পোষণ করে বসে ছিলেন। কিন্তু হলো না। একবার পেছন ফিরে তাকান। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে কত নাটক হয়েছে, একবার রিভিউ করে দেখুন। বুঝতে পারবেন— আমরা কতটা পিছিয়ে আছি, আর কতটা এগিয়েছি।
দোসরদের সিন্ডিকেট এখনো অপ্রতিরোধ্য। তার প্রমাণ ভারত ম্যাচে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ফাহামেদুল, আর জামাল ভূঁইয়াকে সাইডলাইনে বসিয়ে রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কোচ কাবরেরা।
দোসরদের সিন্ডিকেট এখনো অপ্রতিরোধ্য। তার প্রমাণ ভারত ম্যাচে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ফাহামেদুল, আর জামাল ভূঁইয়াকে সাইডলাইনে বসিয়ে রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কোচ কাবরেরা।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে ছিল সিন্ডিকেটের একক আধিপত্য। পেছনের সত্যটা আপনাকে হতবাক করবে নিঃসন্দেহে। ফাহামেদুলকে দল থেকে বাদ দিয়ে আর জামালকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হলো। আর অনুশীলনে চোটগ্রস্ত তপু বর্মন খেলার মতো ফিট না থাকা সত্ত্বেও জোর খাটিয়ে হাফফিট থাকার পরও খেলতে নামেন। আর জামালকে বাদ দিয়ে তপুকে অধিনায়ক করে মাঠে নামালেন কোচ কাবরেরা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র হলো।

আর সিঙ্গাপুর ম্যাচে সাদ উদ্দিন কি করেছে? সেদিন সিঙ্গাপুর ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি পেছন থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলেন। সিঙ্গাপুরের হামি শাহীনের শটে গোলকিপার মিতুল মারমা বল পাঞ্চ করলে বল পড়ে তারকা স্ট্রাইকার ইখসান ফান্দির পায়ে। ফান্দি তার সামনে থাকা হৃদয়কে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠালেন। কিন্তু দেশসেরা ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন চেয়ে চেয়ে দেখলেন— কীভাবে সিঙ্গাপুরের ফান্দি গোল দিলেন। এটি সত্যিই হাস্যকর। সবাইকে অবাক করেছে।
অথচ তার জায়গায় জামাল থাকলে অন্যরকম ফলাফল হতো। এবার ভাবুন, যারা ১৫ বছরে ফুটবলকে তলানিতে নিয়ে গেছেন, তারা নিজেদের স্বার্থে দেশকে ডোবাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জামালকে ইচ্ছাকৃত বসিয়ে রেখে খেলানো হয়েছে চিহ্নিত সিন্ডিকেটের খেলোয়াড়দের। আর চিহ্নিত সিন্ডিকেটের খেলোয়াড়রা নিশ্চিত ৩টি গোল মিস বাংলাদেশকে চরম ভুগিয়েছে। তাদের খেলায় চরম মাত্রায় প্রশ্নবিদ্ধ।
আমার আফসোস আসলে একটাই— এরা নিজের জন্য খেলে দেশের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। অথচ কর্মকর্তারা চোখবুজে আছে। জামাল ভূঁইয়া দেশসেরা ডিফেন্ডার, আবার অধিনায়কও। কিন্তু তাকে মাঠে নামানো হয় না।
ভারত ম্যাচের আগে ফাহামেদুলকে বয়স কম বলে কোচ তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। আর তাকে ভারত ম্যাচে না নামানোয় ফুটবলপ্রেমী দর্শকরা আন্দোলন শুরু করলে বাফুফের কর্মকর্তারা কোচের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সিঙ্গাপুর ম্যাচে মাঠে নামালেন। এর পরেরটা ইতিহাস। আফসোস— যদি ভারত ম্যাচেই তাকে নামানো হতো, হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতো। এখন প্রশ্ন হলো— তাহলে ভারত ম্যাচের আগে কেন অল্প বয়সের অজুহাতে কোচ তাকে বিদায় করলেন? ক্ষতি কার হলো— কাবরেরার নাকি বাংলাদেশের?

আর নির্লজ্জ কাবরেরার পরিষ্কার হিংসাত্মক মনোভাব তো জাতির কাছে স্পষ্ট। ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচে জামাল ভূঁইয়াকে মাঠে না নামানো নিয়ে শুধু কাবরেরার একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না; এটা ছিল দোসরদের সিন্ডিকেটের মাহাত্ম্য। তাদের ইশারায় ফাহামেদুল ও জামাল ভূঁইয়া দলের বাইরে ছিলেন। দলীয় সিন্ডিকেটেই তারা দুজন বলির পাঁঠা হয়েছেন।
কারণ ২০১৩ সালে মৃত ফুটবলকে জাগাতে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল এসেছিলেন বাংলাদেশে। এরপর সময়ের পরিক্রমায় অধিনায়কের দায়িত্ব পান। এখনো জামাল ভূঁইয়া জাতীয় দলের অধিনায়ক। কিন্তু কাবরেরার চোখে তিনি হয়ে উঠলেন চক্ষুশূল। এমনকি দোসর স্থানীয় কিছু খেলোয়াড়ের কাছেও।
- জামাল এখন শুধু ফটোসেশন আর সংবাদ সম্মেলনেই অধিনায়ক, যা ইতিহাসে বিরল। কেন বিরল? শুধু ভারত-সিঙ্গাপুর ম্যাচেই নয়; এর আগে ভুটানের দুটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচেও ফটোসেশন ও সংবাদ সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ ছিলেন জামাল ভূঁইয়া।
জামাল এখন শুধু ফটোসেশন আর সংবাদ সম্মেলনেই অধিনায়ক, যা ইতিহাসে বিরল। কেন বিরল? শুধু ভারত-সিঙ্গাপুর ম্যাচেই নয়; এর আগে ভুটানের দুটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচেও ফটোসেশন ও সংবাদ সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। কোনো ম্যাচেই তাকে মাঠে নামানো হয়নি। অথচ ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচে ফাহামেদুল ও জামাল ভূঁইয়াকে মাঠে নামানো হলে রেজাল্ট অন্যরকম হতে পারত।
তার প্রমাণ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলা ফাহামেদুল, আর ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে জামাল ভূঁইয়ার কর্নার কিক থেকে হামজার গোলোৎসব। তারা দুজন , কেমন খেলেছেন সেটা সবাই দেখেছেন। জামাল হচ্ছেন কর্নার কিক মাস্টার। সিঙ্গাপুর ম্যাচে শেষের দিকে টানা পাঁচটি কর্নার এসেছে কিন্তু গোল ধরা দেয়নি। অথচ জামাল ভূঁইয়ার বিপক্ষ দলের গোল পোস্টে গিয়ে হেডেও গোল করার রেকর্ড রয়েছে।
কিন্তু সিঙ্গাপুর ম্যাচে হৃদয়-কাজিমরা যখন বারবার ফেল করছিলেন, দলও ২ গোলে পিছিয়ে ছিল, তখন শেষ দিকে জামালকে না নামানোর কোনো কারণও খুঁজে পাননি ফুটবলবোদ্ধারা। তবে কি ১০ মিনিটও খেলার যোগ্যতা রাখে না জামাল? তবে কি শুধু ফটোসেশন আর সংবাদ সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ থাকবেন তিনি। এটা কি তাকে অপমান-অপদস্ত করা নয়? এটা কি দোসরদের নিখুঁত কারসাজি নয়?

কেন কোচ কাবরেরাসহ দোসরদের চোখে আঁকাবাঁকা দৃষ্টি? এভাবেই কি লীলাখেলা চলবে ঘাটে ও মাঠে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন হলেও এখনো ফুটবলের দোসররা ধরাছোঁয়ার বাইরেই আছেন। তারা ফুটবলকে ঘিরে ধরে রয়েছে অক্টোপাশের মতো। এসবের অর্থ কি? রীতিমতো নিকৃষ্টতম কাজ করে যাচ্ছেন কোচ কাবরেরাসহ পুরো কোচিং স্টাফ— এমনকি বাফুফের একাংশের কর্মকর্তারাও।
আমাদের ভালো একটি শক্তিশালী দল তৈরি হয়েছে। ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে দলে যুক্ত করা হয়েছে হামজা চৌধুরী, ফাহামেদুল, শমিত সোম ও কিউবা মিচেলকে। আরও বড় বিশ্বমঞ্চে খেলার মতো দল গঠন করা হচ্ছে। বাঙালি প্রবাসী সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলমান। আরও শক্তিশালী হয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ—এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।
নির্লজ্জ কাবরেরার পরিষ্কার হিংসাত্মক মনোভাব তো জাতির কাছে স্পষ্ট। ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচে জামাল ভূঁইয়াকে মাঠে না নামানো নিয়ে শুধু কাবরেরার একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না; এটা ছিল দোসরদের সিন্ডিকেটের মাহাত্ম্য
এই আরও শক্তিশালী হয়ে যেমন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলাম। যেমন সবাই স্বপ্ন দেখে বলেছিলাম— সিঙ্গাপুরকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার। ঠিক একই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে হংকংয়ের বিপক্ষেও।
আর যদি স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই, বাস্তবে রূপ দিতে চাই, তাহলে প্রথমেই আমাদের গোলকিপার মিতুল মারমাকে সরিয়ে দেশসেরা গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ তিনি দেশসেরা গোলকিপার। আর দেখুন, সিঙ্গাপুর ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি যখন ডি-বক্সের বাইরে সিঙ্গাপুরের প্লেয়ার শট নেয়, তখন সেই বলটি মিতুল মারমা রিসিভ না করে পাঞ্চ করেন; অথচ বলটি এমন কঠিন কোনো বল ছিল না যে পাঞ্চ করে দিতে হবে; তাও আবার বলটি সেই সিঙ্গাপুরের প্লেয়ার ফান্দির সামনেই পাঞ্চ করে দেন। এর পরেরটা ইতিহাস—সাদ উদ্দিন চেয়ে চেয়ে দেখলেন।
আর হৃদয়কে হৃদয়ের ভালোবাসা না দেখিয়ে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হোক। কারণ এই হৃদয় ব্যাকপাসে পারদর্শী। তাকে সামনে বল বাড়াতে কখনো দেখা যায়নি সিঙ্গাপুর ম্যাচে। তিনি শুধু বল ব্যাকপাস করে গেছে। তাকে আমরা ব্যাকপাস মাস্টার খেতাব দিতে পারি। সেই সঙ্গে দেশসেরা ফিনিশারকে চিরতরে ফিনিশ করতে হবে। কারণ সিঙ্গাপুর ম্যাচের ১৪ মিনিটের সময় এই ফিনিশার ডি-বক্সের মধ্য থেকে বল মারার আগে নিজেই পড়ে গেছেন, তা থেকে বোঝা গেছে— দলের পরিণতি কি হতে চলেছে। শেষ পর্যন্ত ফলাফলও তাই হয়েছে। অথচ অনূর্ধ্ব-১৭ ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ফাইনাল খেলায় যে ৪ গোল হয়েছে, তা ছিল বিশ্বমানের, দেখার মতো— ইউরোপের খেলোয়াড়দের মতো। সুতরাং বাফুফের এই আরও শক্তিশালী...
(শেষ পর্ব আগামীকাল)



-680f15e2130ea.jpg)