পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের ডজনেরও বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা মালিক আহমদ ভাচার।

পাকিস্তানের আইন উপমন্ত্রী আকিল মালিক মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধীদলীয় নেতা মালিক আহমদ ভাচারকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

বুধবার (২৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।

পাঞ্জাব পাকিস্তানের জনবহুল ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রদেশ। রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাচার জানান, তিনি ইমরান খানের প্রতি সমর্থন ত্যাগ করবেন না।

খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর একজন মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাচারকে গ্রেফতার করা হয়নি।

সর্গোদার একটি আদালত আরও একজন বর্তমান আইনপ্রণেতা, এক সাবেক সংসদ সদস্য এবং পিটিআইয়ের আরও ৩২ জন সমর্থককে সরকারি স্থাপনায় হামলার অভিযোগে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে। পাশাপাশি লাহোরের একটি আদালত লাহোরে দাঙ্গার ঘটনায় পিটিআইয়ের আরও ৮ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে।

আরও পড়ুন

আরও পড়ুন

আমার কিছু হলে দায়ী থাকবেন সেনাপ্রধান মুনির: ইমরান খান

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন পাঞ্জাবের সাবেক গভর্নর ওমর সরফরাজ চিমা, সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ইয়াসমিন রাশিদ এবং বর্তমান সিনেটর ইজাজ আহমদ চৌধুরী। তবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ও আরও পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ইমরান খান ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথমবার গ্রেফতার হলে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে কিছু বিক্ষোভ সামরিক স্থাপনাকেও লক্ষ্যবস্তু করে।

মঙ্গলবার দেওয়া এই সাজা ইমরান খানের নির্বাচনী এলাকা মিয়ানওয়ালি ও লাহোরে পুলিশ ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগে দেওয়া হয়েছে। সামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার হচ্ছে সামরিক আদালতে।

পিটিআই জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবে।

লন্ডনভিত্তিক পিটিআই মুখপাত্র সৈয়দ জুলফিকার বুখারি বলেছেন, এই মামলা ও রায় ‘প্রক্রিয়াগত ত্রুটি, পক্ষপাতদুষ্ট বিচার এবং সাংবিধানিক লঙ্ঘনের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলাগুলো রাজনৈতিক নাটক, যা দ্রুত শেষ করার জন্য দিন-রাত শুনানি চলছে, এমনকি শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্তও।’

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ইমরান খান দুর্নীতির একাধিক মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন, যা তার দল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই দাবি করে। খানের সমর্থক এবং পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ইমরান খানের নাম টেলিভিশনে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত বছর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ইমরান খানের আটক ‘আইনসঙ্গত নয় এবং তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।’

তবে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা এখনও পাকিস্তানের নাজুক জোট সরকারকে চাপে রেখেছে, যা গত বছরের নির্বাচনের পর পিটিআইকে ক্ষমতার বাইরে রেখেছে।