Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত

বিয়ে মানবজীবনের একটি পবিত্র সম্পর্ক, যেখানে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের মেলবন্ধন ঘটে। ইসলামে বিয়ে কেবল সামাজিক প্রথা নয়, এটি নবীজি (সা.)-এর সুন্নত, ইবাদত ও দ্বীন রক্ষার অর্ধেক অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي

‘বিয়ে আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (ইবন মাজাহ ১৮৪৬)

ইসলামী দৃষ্টিতে বিয়ের উদ্দেশ্য

বিয়ের আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া মানে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে বিয়ে পরবর্তী সময়ে প্রশান্তি, ভালোবাসা ও দয়ায় ভরপুর থাকে জীবন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন—

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً

‘তিনিই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।’ (সুরা আর-রূম: আয়াত ২১)

কুরআনের এই আয়াতে তিনটি শব্দের মধ্যে নিহিত রয়েছে ইসলামী দাম্পত্য জীবনের মূল দর্শন। তাহলো—

> সাকিনা (প্রশান্তি),

> মাওয়াদ্দাহ (ভালোবাসা) এবং

> রহমাহ (দয়া)। এগুলো অর্জনের জন্যই বিয়ের আগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা অপরিহার্য।

তরুণদের জন্য নবী (সা.)-এর পরামর্শ

বিয়ের ব্যাপারে নবীজি (সা.) শুধু উৎসাহই দেননি, বরং প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়েছেন। বিয়ের আগে প্রত্যেক তরুণের থাকতে হবে আর্থিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ

‘হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে।’ (বুখারি ৫০৬৫, মুসলিম ১৪০০)

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ ৫টি দিক

১. দায়িত্ববোধ তৈরি করা

বিয়ে মানে নতুন দায়িত্ব। একজন মুসলিম পুরুষ বা নারীকে বুঝতে হবে, এটি শুধু রোমান্টিক সম্পর্কই নয়, বরং একে অপরের জন্য হবে নিরাপদ আশ্রয়। বিয়ের পর মানসিকভাবে দায়িত্ব নিতে না পারলে, ভালোবাসা থাকলেও সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ

‘পুরুষগণ নারীদের অভিভাবক ও দায়িত্বশীল।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ৩৪)

২. ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা অর্জন

জীবনের প্রতিটি সম্পর্কেই মতবিরোধ আসে। তাই বিয়ের আগে ধৈর্য ও ক্ষমার গুণ অর্জন করা উচিত। কারণ মানুষ নিখুঁত নয়; ধৈর্যই সম্পর্কের রক্ষাকবচ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ

‘কোনো মুমিন যেন তার স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। যদি তার কোনো দোষ অপছন্দ হয়, তবে অন্য গুণ নিশ্চয়ই পছন্দ হবে।’ (মুসলিম ১৪৬৯)

৩. চরিত্র ও তাকওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া

আজকের সমাজে বাহ্যিক সৌন্দর্য বা অর্থ-সম্পদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু ইসলাম বলেছে— প্রকৃত সৌন্দর্য হলো চরিত্র ও তাকওয়া। সুন্দর চরিত্র ও তাকওয়াই সংসারকে জান্নাতমুখী করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ

‘যখন এমন কেউ প্রস্তাব দেয় যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয়, তাহলে তাকে বিয়ে কর।’ (তিরমিজি ১০৮৪)

৪. পরস্পরকে বোঝার মানসিকতা তৈরি

বিয়ের আগে নিজের মতামত প্রকাশ ও অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভালো যোগাযোগ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া তৈরি করে, যা দাম্পত্য জীবনের প্রাণ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ

‘তুমি তাদের সাথে পরামর্শ করো।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৫৯)

৫. আল্লাহর ওপর ভরসা ও দোয়ার অভ্যাস

বিয়ে কেবল মানুষের সিদ্ধান্ত নয়, এটি তাকদিরের অংশ। তাই বিয়ের আগে ও পরে আল্লাহর ওপর ভরসা করা ও দোয়া করা অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

‘মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপরই ভরসা করা।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১২২)

তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বোত্তম দোয়া হলো—

اللَّهُمَّ اخْتَرْ لِي وَلَا تُخَيِّرْ عَلَيَّ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাখতার লি ওয়া লা তুখাইয়্যের আলাইয়্যা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনি পছন্দ করুন, আমাকে নিজের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেবেন না।’

বিয়ে সফল হয় তখনই, যখন উভয়েই একে অপরের জন্য দয়া, প্রশান্তি ও নিরাপত্তার উৎস হয়। পরস্পর জান্নাতমুখী সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যায়। এক অপরের জন্য হয়ে যায় একাকার। যেমনটি আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ

‘তোমরা একে অপরের জন্য পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ১৮৭)

পোশাক যেমন দেহকে আবৃত করে ও সুরক্ষা দেয়, তেমনি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের দোষ ঢেকে রাখে, মানসিক আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর রহমতের ছায়া বেড়ে ওঠে। এই হলো ইসলামী বিবাহের প্রকৃত সৌন্দর্য।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম