বিচ্ছেদের পর আগের স্ত্রীকে নিয়ে আবারও সংসার করার বিধান কী?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসলামের শুরুর যুগে নির্যাতনের লক্ষ্যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেরকে বারবার তালাক দেওয়া এবং ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্যে সময় অতিবাহিত করতো। এর ফলে স্ত্রীরা স্বামীর সঙ্গেও বসবাস করতে পারতো না আবার অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারতো না। আবার অনেকে তিন তালাক দেওয়ার পর পুনরায় তাদের স্ত্রীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতো। এমতাবস্থায় তৃতীয় তালাকের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীদের ফিরিয়ে নেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যদি কেউ আগের স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চায়, সেক্ষেত্রে করণীয় কী?
এক বা দুই তালাক দিলে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু ইদ্দত পার হয়ে গেলে স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। নিয়মিত তিন তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার আর সুযোগ থাকে না। তারপরেও বিচ্ছেদের পর আগের স্ত্রীকে নিয়ে আবারাও সংসার করতে চাইলে তাকে নতুনভাবে বিয়ে করতে হবে। এ সম্পর্কে কুরআনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশা দিয়েছে মহান আল্লাহ-
فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡكِحَ زَوۡجًا غَیۡرَهٗ ؕ فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِمَاۤ اَنۡ یَّتَرَاجَعَاۤ اِنۡ ظَنَّاۤ اَنۡ یُّقِیۡمَا حُدُوۡدَ اللّٰهِ ؕ وَ تِلۡكَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ یُبَیِّنُهَا لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ
‘অতঃপর যদি সে তাকে (চূড়ান্ত) তালাক দেয়, তবে এরপর সেই পুরুষের পক্ষে সেই স্ত্রী (বিবাহ) হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে। অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, তবে উভয়ের পুনরায় মিলিত হওয়াতে গুনাহ নেই, যদি উভয়ের আস্থা জন্মে যে উভয়ে আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে। এসব আল্লাহর (আইন) সীমাসমূহ, এগুলোকে সেই লোকদের জন্য তিনি বর্ণনা করেন যারা জ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৩০)
এ আয়াতে বলা হয়েছে, যদি তিন তালাক দেওয়া হয়; তবে-
স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দেওয়ার পর পুনরায় সে স্ত্রীকে বিয়ে করার কামনা করে; তবে করণীয় কী? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দেয় তবে অন্য লোকের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া ব্যতিত সেই স্ত্রী (প্রথম) স্বামীর জন্য হালাল নয়।
পরে যখন (দ্বিতীয় স্বামী সহবাসের পর) স্ত্রীকে তালাক দেয়, তখন তারা যদি এ ধারণা করে যে, আল্লাহ পাকের সীমার ভেতর থাকতে পারবে অর্থাৎ আল্লাহর বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে পারবে) তবে উভয়ে পুনঃ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের জন্য কোনো গুনাহ নেই। এ সব আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমা।
কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর তাকে পুনরায় বরণ করে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। তবে তার জন্য একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা হলো ‘হালালাহ’ করা। অর্থাৎ অন্য স্বামীর নিকট নিয়মিত বিবাহ দেওয়া এবং তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা।
অতঃপর তাদের মাঝে সংসার জীবনে কোনো কারণে যদি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; তবে ইদ্দত পালনের পর ওই স্ত্রী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে।
মনে রাখতে হবে-
প্রথম স্বামীর বিবাহের উদ্দেশ্যে কোথাও স্ত্রীকে বিয়ে দিয়ে তালাকের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি পরিকল্পনামাফিক বিয়ে এবং তালাক সম্পাদন করা ‘হালালাহ’-এর অন্তর্ভূক্ত নয়।
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম রাজি (রহ.) বলেন, ‘তিন তালাকের পরও যদি স্ত্রী স্বামীর কাছে আসতে চায় তবে পাঁচটি কাজ অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে। আর তা হলো-
১. তিন মাস ইদ্দত অতিবাহিত করতে হবে;
২. দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ হতে হবে;
৩. দ্বিতীয় স্বামীর সাথে শুধু নামে মাত্র বিবাহ হলে চলবে না, বরং তার সাথে যথারীতি সহবাস করতে হবে;
৪. দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক তাকে তালাকপ্রাপ্ত হতে হবে এবং এ তালাকের জন্য পুনরায় তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে।
৫. পুনরায় প্রথম স্বামীর সাথে নিয়মিতভাবে বিবাহ হতে হবে।
