Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

তীরবিদ্ধ হয়েও নামাজ ছাড়েননি যে সাহাবি

আরাফাত বিন শাহ আলম

আরাফাত বিন শাহ আলম

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম

তীরবিদ্ধ হয়েও নামাজ ছাড়েননি যে সাহাবি

আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি বা রিবাত হলো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত, যার গুরুত্ব ও মর্যাদা অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এটি কেবল সামরিক দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহান সুযোগ।

এই ইবাদতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে কখনো স্পর্শ করবে না। একটি হলো সেই চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে। আর দ্বিতীয়টি হলো সেই চোখ, যা আল্লাহর রাস্তায় (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে নিদ্রাহীন রাত পার করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৯)

এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর পথে পাহারাদারি করা জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় এবং এর মাধ্যমে কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সাহাবায়ে কিরাম (রা.) আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারিকে গনিমত (বড় প্রাপ্তি) মনে করতেন। তারা এই দায়িত্ব পালনে এতটাই আন্তরিক ছিলেন যে, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করতেন না। মুসলমানদের পাহারাদারি করতে গিয়ে এক সাহাবি উম্মাহর সামনে সর্বোচ্চ ত্যাগের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

তার ঘটনাটি নিম্নরূপ:

জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলের (সা.) সঙ্গে নাজদের দিকে বের হলাম, পথিমধ্যে আমরা এক মুশরিকের বাড়ি অতিক্রম করার সময় তার স্ত্রীকে হত্যা করলাম। রাসুল (সা.) আবার এই পথেই (আমাদের কাছে) ফিরে আসলেন। আর ইতোমধ্যে মহিলার স্বামী দীর্ঘ সময় পর ফিরে আসলে তার স্ত্রীর (হত্যার বিষয়ে) তাকে জানানো হলে, সে কসম করে বলে রাসুল (সা.)-এর কোন একজন সাহাবির রক্তপাত ঘটানো ছাড়া সে ফিরে যাবে না। 

ওদিকে রাসুল (সা.) এক উপত্যকায় অবতরণ করে বলেন, এমন দু’জন কে আছে যে আমাদেরকে শত্রুর মোকাবেলায় পাহারা দেবে? সঙ্গে সঙ্গে একজন আনসারি সাহাবি ও একজন মুহাজির (আম্মার বিন ইয়াসির (রা.)) সাহাবি (তারা দুইজন বলে উঠল) হে আল্লাহর রাসুল, আমরা পাহারা দেব। এরপর তারা দুজন সেনাদের পেছনে গিরিপথে অবস্থান নিলেন। তারা দুইজন নিজেদের মধ্যে পালা বন্টন করে নিল। 

মুহাজির সাহাবি বললেন, আপনি প্রথম রাতে পাহারা দিন আর আমি শেষ রাতে পাহারা দিবো। একথা বলে মুহাজির সাহাবি ঘুমিয়ে পড়ল আর আনসারি সাহাবি নামাজে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতে লাগলেন। হঠাৎ মহিলার স্বামী মুসলমানদের পাহারাদার আব্বাদ ইবনু বিশর (রা.)-কে লক্ষ করে তীর নিক্ষেপ করতে থাকে। 

পরপর তিনটা তীর নিক্ষেপ করে। প্রতিটি তীর তার গায়ে বিদ্ধ হয়ে যায়। তিনি নামাজ ছাড়লেন না। নামাজ অবস্থায়ই তীর টেনে বের করে ফেললেন। তৃতীয় তীরের পর তিনি যথারীতি রুকু সেজদা করে নামাজ শেষ করলেন। নামাজ শেষে তার সাথিকে জাগালেন। তাদের সতর্ক অবস্থান টের পেয়ে মহিলার স্বামী পালিয়ে গেল। 

মুহাজির সাহাবি আব্বাদকে (রা.) তীরের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে বললেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। প্রথমবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ডাকেননি? তিনি বললেন, আমি একটি সুরা পড়ছিলাম, সেটি শেষ না করে ক্ষান্ত হতে আমার মন মানছিল না।  

আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পাহারাদারীর দায়িত্বে আমাকে নিযুক্ত করেছেন তা ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা যদি না থাকত, তবে সে আমাকে হত্যা করে ফেললেও আমি নামাজ সংক্ষেপ করতাম না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪৪৫১, আবু-দাউদ, হাদিস: ১৯৩)

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি শুধু একটি কাজ ছিল না, বরং তা ছিল সাহাবীদের ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের কাছে আল্লাহর ইবাদত এবং মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা ছিল অপরিসীম গুরুত্বের বিষয়।

সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি করা একটি মহৎ ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত, যা মুমিনদের জান্নাতের পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম