যে কারণে মানুষ বারবার ভুল পথে পা বাড়ায়
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মৃত্যুর সময় সবার জন্য নির্ধারিত। নির্ধারিত সময়ের এক সেকেন্ড আগেও হবে না, পরেও হবে না। আর এটা এতটাই অকাট্য বিষয় যে, দুনিয়ার কোনো ধর্ম তা অস্বীকার করেনি। কোনো দর্শন ও বিজ্ঞান এর বিরোধিতা করেনি; কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশির ভাগ লোক চরম সত্যটাকে ভুলে রয়েছে।
মানুষ কিছু দিন পরপর নিজ হাতে প্রিয়জনদের সমাহিত করছে কিন্তু সে ভুলে যাচ্ছে নিজেকেও একদিন এভাবে সমাহিত হতে হবে। অসংখ্য মানুষের জানাজায় হাজির হচ্ছে, কিন্তু তার এই বোধ নেই যে, একদিন তার জানাজাও পড়া হবে।
প্রিয়জন যখন মারা যায় তখন আমরা কান্নাকাটি করি, সপ্তাহ-মাস শোকে কাতর থাকি। আস্তে আস্তে যখন তা ভুলতে থাকি তখন নিজের মৃত্যুর কথাও ভুলে যাই। আর এই ভুলের কারণেই আমরা অন্যায়ের পথে পা বাড়াই।
আমরা কবরকে বেমালুম ভুলে আছি। এই কবর ও আখেরাতকে ভুলে যাওয়ার কারণেই মানুষ অন্যায় করার মতো দুঃসাহস দেখায়। কবর চোখের সামনে থাকলে, আখেরাত ও ময়দানে হাশরের দৃশ্য চোখে ভাসলে, আজাবের কথা স্মরণ থাকলে মানুষ গোনাহকে ভয় করার কথা।
তখন তার ভাবনায় থাকবে দুনিয়া তো অল্প কয়েক দিনের। কত দিন, কত ঘণ্টা, কত সেকেন্ডের মধ্যে জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে সেটা আমাদের কারোই জানা নেই। এই ভাবনা ভেতরে সজীব থাকলে অন্যায় করা হবেই না, হলেও তা মাত্রায় খুবই কম। কখনো কোনো অন্যায় হয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা ছাড়া তার ভেতরে স্বস্তি আসবে না।
আখেরাতের ভাবনা যার অন্তরে সক্রিয় তার দ্বারা কখনো কেউ জুলুমের শিকার হবে না। কারণ জুলুম করার আগে তার স্মরণ হবে কবরের কথা। আখেরাতের দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতে থাকবে। অন্তরে এই ভাবনা ঘুরপাক খাবে, সামান্য জুলুম করলেও কেয়ামতের দিন এর হিসাব আমাকে দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَ مَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল: আয়াত ৭-৮)
যার কবরের কথা স্মরণ নেই, মৃত্যুর কথা স্মরণ নেই, হাশরের ময়দানের দৃশ্য যাদের চোখের সামনে ভাসে না, পুলসিরাতের ওপর দিয়ে পার হওয়ার কথা কল্পনা করে না সে অন্যায়ের পর অন্যায় করে যায়। ধারাবাহিকভাবে তার অন্যায়ের ফলে গোনাহের মাত্রা শুধু বাড়তেই থাকে। তওবার তৌফিক তার হয় না। এমনকি হঠাৎ একদিন মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তাকে ধরে এবং প্রাণ কেড়ে নেয়।
আসুন মৃত্যুকে স্মরণ করি, কবরকে স্মরণ করি, মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করি, ভুলমুক্ত জীবন গড়ি। মৃত্যুকে স্মরণ আর মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতিই হতে পারে অন্যায়ের পথে পা বাড়ানো থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।
