ব্যাংক থেকে পাওয়া লভ্যাংশ মসজিদ-মাদ্রাসায় ব্যয় করা যাবে কী?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আর্থিক সুরক্ষার জন্য মানুষ ব্যাংকে নিজেদের টাকা-পয়সা জমা রাখে। ব্যাংকও নিয়ম অনুযায়ী জমা টাকার লভ্যাংশ বা সুদ দিয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাংকের এ লভ্যাংশ বা সুদ কোনো মসজিদ অথবা মাদরাসায় ব্যয় করা যাবে কি না?
এই প্রশ্নের জবাব হলো— সুদভিত্তিক ব্যাংকে পরিচালিত লেনদেনের লভ্যাংশ বা সুদ থেকে প্রাপ্ত টাকায়- মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, হাসপাতালের মতো ইত্যাদি সামাজিক কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। কারণ এসব স্থাপনা থেকে ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ উপকৃত হয়।
এসব ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ বা লভ্যাংশ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া নিজের দায়মুক্তির জন্য শরিয়তের দৃষ্টিতে জাকাতের উপযুক্ত অসহায়, দুস্থ ও গরিবদের দিতে হবে। সুদি অর্থের একমাত্র হকদার জাকাতের উপযুক্ত লোকেরা। অধিকন্তু মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ পবিত্র। তার ঘরও পবিত্র। তার পবিত্র ঘরে হারাম অর্থ ব্যয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে—
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
‘হে লোকেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি কেবল পবিত্র সম্পদই গ্রহণ করে থাকেন।’ (মুসলিম ২২১৮)
তবে মাদরাসার নির্মাণকাজ ও সাধারণ তহবিলে সুদি অর্থ ব্যয় করা নাজায়েজ হলেও ‘গুরাবা তহবিল’ নামক বিশেষায়িত একটি তহবিলে এই টাকা দান করা যেতে পারে। যদি এই তহবিল থেকে শুধু জাকাতের হকদার গরিব ছাত্রদের ব্যয়ভার বহন করা হয়।
আরও পড়ুন
দেশের ব্যাংকগুলো দুই ভাগে বিভক্ত— সুদভিত্তিক ব্যাংক আর শরিয়াভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক। সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে যে লভ্যাংশ আসে, তা শরিয়তের দৃষ্টিতে সুদ বলে বিবেচিত। এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের কোনো দ্বিমত নেই। কারণ ব্যাংকে রাখা ডিপোজিট শরিয়তের দৃষ্টিতে ‘করজ’ তথা ঋণ বলে গণ্য হয়। আর ঋণের ওপর সব অতিরিক্ত অংশই সুদ। তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িদের থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনায় জানা যায়—
كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ نَفْعًا فَهُوَ رِبًا
‘যে ঋণ কোনো উপকার বয়ে আনে তা-ই সুদ।’ (ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ ৩/৩৮০, দায়লামি ৪৭৭৮)
উল্লেখ্য, দেশের প্রচলিত শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত মুনাফার বা লভ্যাংশের ব্যাপারেও আলেমদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। একদল আলেম একে হালাল মনে করলেও ইসলামি স্কলারদের একটি বৃহৎ অংশ মনে করেন, দেশের ইসলামি ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে ইসলামি পদ্ধতিতে লেনদেন করার দাবি করলেও মাঠে-ময়দানে তারা ইসলামের বিধান পূর্ণ অনুসরণ করে না বা করতে পারেন না। তাই ইসলামের বিধি-বিধান প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত মুনাফা গ্রহণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। সুতরাং এ ধরনের মুনাফা ভোগ করা অনুচিত।
