ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আল্লাহ তাআলা সময়কে মর্যাদা দিয়েছেন, আর কিছু সময়কে দিয়েছেন বিশেষ সম্মান। তেমনই এক সম্মানিত মাস হলো রজব— যা আমাদের হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে, গুনাহ থেকে ফিরে আসার ডাক দেয় এবং রমজানের প্রস্তুতির দুয়ার খুলে দেয়। রজব যেন এক নীরব সতর্কবার্তা— এই মাস আমাদের শেখায়— আত্মশুদ্ধি, তাওবা, তাকওয়া ও আল্লাহমুখী হওয়ার সৌন্দর্য। আর আহ্বান করে— ‘হে বান্দা! ফিরে এসো… এখনো সময় আছে।’ এ মাস এলেই নবিজী (সা.) এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন—
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রজাবিও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ ২৩৪৬)
রজব মাসের মর্যাদা: কুরআনের আলোকে আল্লাহ তাআলা বলেন—
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِكَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ
‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারটি। এর মধ্যে বিশেষ রূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম।’ (সুরা আত-তাওবা: আয়াত ৩৬)
এই চার সম্মানিত মাস হলো— ‘যিলক্বদ, যিলহজ্জ, মুহাররম ও রজব।’
রজব মাস কেন বিশেষ?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
رَجَبُ شَهْرُ اللَّهِ، وَشَعْبَانُ شَهْرِي، وَرَمَضَانُ شَهْرُ أُمَّتِي
‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস, আর রমজান আমার উম্মতের মাস।’ (আল-বাইহাকি, শুআবুল ঈমান)
রজব মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ
> তাওবা ও ইস্তেগফার
রজব মাস আত্মসমালোচনার শ্রেষ্ঠ সময়। তাই বেশি বেশি এ তাওবা পড়া—
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ: ‘আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি— যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক এবং আমি তারই কাছে তাওবা করছি।’
> নফল রোজা রাখা
রাসুলুল্লা (সা.) সম্মানিত মাসগুলোতে বেশি বেশি রোজা রাখতেন।
كَانَ يَصُومُ مِنَ الْأَشْهُرِ الْحُرُمِ
‘তিনি সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ ২৪২৮)
যদিও নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সওয়াবের কথা হাদিসে উল্লেখ নেই— তবে সাধারণ নফল রোজা পালন উত্তম।
> নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে রাতের কিছু সময় তাহাজ্জুদ তথা নামাজ পড়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন—
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ
‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো—এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত।’ (সুরা আল-ইসরা: আয়াত ৭৯)
> বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত
হৃদয়কে নরম করার মাস রজব। আল্লাহ তাআলা বলেন—
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ
‘তারা কি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে না?’ (সুরা মুহাম্মদ: আয়াত ২৪)
> দান-সদকা ও মানবসেবা
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ…
‘যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে—তাদের উদাহরণ এক দানার মতো…’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ২৬১)
রজব মাসের মাসনুন দোয়া
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রজব মাসের বহুল প্রচলিত দোয়া রয়েছে। যা রজব মাস শুরু হলেই নবীজি (সা.) নিজেই পড়া শুরু করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে পড়তে বলতেন। তাহলো—
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রজাবিও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ ২৩৪৬)
হৃদয় পরিশুদ্ধির দোয়া—
اللَّهُمَّ طَهِّرْ قُلُوبَنَا مِنَ النِّفَاقِ، وَأَعْمَالَنَا مِنَ الرِّيَاءِ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ত্বহহির ক্বুলুবানা মিনাননিফাক্বি ওয়া আ’মালানা মিনার রিয়ায়ি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে মুনাফিকি থেকে পবিত্র করে দিন এবং আমাদের সব আমলকে লোকদেখানো ও রিয়া থেকে মুক্ত করুন।’
রজব কোনো উৎসবের মাস নয়— এটি ফিরে আসার মাস। গুনাহ থেকে, অবহেলা থেকে, আল্লাহ থেকে দূরে থাকার জীবন থেকে। আজ যদি আমরা রজবে বদলাই, শাবানে গুছাই, তবে রমজানে আল্লাহ আমাদের গ্রহণ করবেন—ইনশাআল্লাহ। আমরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি—
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا
‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের হেদায়েত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরকে বক্র করবেন না।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৮)
তাই রজবকে আল্লাহ আমাদের আত্মশুদ্ধির মাস বানান—আমিন।
