Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরানোর আগ মুহূর্তে নামাজে শরিক হলে কি জামাত আদায় হবে?

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরানোর আগ মুহূর্তে নামাজে শরিক হলে কি জামাত আদায় হবে?

ফাইল ছবি

জামাতে নামাজ আদায় করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) জামাতে নামাজের ফজিলত একাকি নামাজের তুলনায় বহুগুণ বেশি বলে ঘোষণা করেছেন। তবে প্রায়ই একটি প্রশ্ন উঠে আসে— কেউ যদি ইমামের সালাম ফেরানোর ঠিক আগ মুহূর্তে এসে নামাজের জামাতে শরিক হয়, তাহলে সে কি জামাত আদায়কারী হিসেবে গণ্য হবে? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানতে হলে কুরআন, সহিহ হাদিস, সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং চার মাজহাবের ফিকহি ব্যাখ্যার আলোকে বিষয়টি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

কুরআনের দলিল (ইশারা ও মূলনীতি)

وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ

‘রুকুকারীদের সঙ্গে তোমরা রুকু করো।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ৪৩)

ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন—এ আয়াতে রুকুর সঙ্গে শরিক হওয়াকেই জামাতে শরিক হওয়ার মূল ভিত্তি হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (তাফসিরে তাবারি খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৯৮, দারুল ফিকর)

হাদিসের দলিল

এক রাকাত পেলে নামাজ পাওয়া

مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ

‘যে ব্যক্তি নামাজের এক রাকাত পেল, সে নামাজ পেল।’ (বুখারি ৫৮০)

ইমাম নববি (রহ.)-এর ব্যাখ্যা

وفيه دليل على أن من لم يدرك ركعة لا يكون مدركًا للصلاة

‘এ হাদিস প্রমাণ করে যে, যে এক রাকাত পায়নি, সে নামাজ (জামাত) পায়নি।’ (শরহে সহিহ মুসলিম, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ১৩৬)


রুকু পাওয়ার হাদিস

إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلاَةُ فَلاَ تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمْ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا

‘যখন নামাজ শুরু হয়, তখন দৌড়ে গিয়ে নামাজে যোগদান করবে না বরং হেঁটে গিয়ে নামাজে যোগদান করবে। নামাজে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামাতের সঙ্গে নামাজ যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও।’ (বুখারি ৯০৮)

এ হাদিস সম্পর্কে ফিকহিবিদদের সর্বসম্মত ব্যাখ্যা হলো— ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ যতটুকু পাও আদায় কর’ বলতে রুকু পাওয়া বোঝানো হয়েছে, কেবল কিয়াম বা বসা নয়।’ (ফতহুল বারি খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫৯)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন—

مَنْ أَدْرَكَ الرُّكُوعَ فَقَدْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ

‘যে ব্যক্তি রুকু পেল, সে রাকাত পেল।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৪৮)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়— নামাজের জামাতে এসে রুকু না পেলে রাকাত এবং জামাত পাওয়া যায় না।

রদ্দুল মুহতার গ্রন্থে এসেছে—

ولا يكون مدركًا للجماعة إلا بإدراك ركعة كاملة

‘সে জামাত প্রাপ্তকারী হিসেবে গণ্য হবে না— যতক্ষণ না সে একটি পূর্ণ রাকাত পায়।’ (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৫৩)

আল-হেদায়া গ্রন্থে এসেছে—

ولا يكون مدركًا للجماعة بإدراك القعدة الأخيرة

‘শুধু শেষ বৈঠক পেলে জামাত পাওয়া হয় না।’ (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৯)

ইমাম নববির আল-মাজমু’ গ্রন্থে এসেছে—

لا تُدرك الجماعة إلا بركعة

‘এক রাকাত না পেলে জামাত পাওয়া যায় না।’ (খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৯২)

সহজ ভাষায় সারকথা, ‘ইমামের সঙ্গে অন্তত এক রাকাত (রুকুসহ) আদায় না করলে জামাতের ফজিলত ও হিসাব পাওয়া যায় না।’


আশ-শারহুল কাবির গ্রন্থে এসেছে—

مَنْ لَمْ يُدْرِكِ الرُّكُوعَ فَلَا يَكُونُ مُدْرِكًا لِلْجَمَاعَةِ

‘যে ব্যক্তি রুকু পায়নি, সে জামাতে শরিক হিসেবে গণ্য হবে না।’ (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২৬)

সহজ ভাষায় সারমর্ম হচ্ছে— ‘জামাতের ফজিলত ও হিসাব পেতে হলে, ইমামের সঙ্গে অন্তত এক রাকাতের রুকুতে শরিক হতে হবে; রুকু না পেলে জামাত আদায় হবে না।’

আল-মুগনি (ইবন কুদামা) গ্রন্থে এসেছে—

وَمَنْ أَدْرَكَ أَقَلَّ مِنْ رَكْعَةٍ لَمْ يَدْرِكِ الْجَمَاعَةَ

‘যে ব্যক্তি এক রাকাতের চেয়ে কম পায়, সে জামাতে শরিক হয়নি।’ (খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২০২) অর্থাৎ জামাত আদায় করতে হলে ইমামের সঙ্গে অন্তত এক পূর্ণ রাকাত আদায় করা জরুরি। এক পূর্ণ রাকাত মানে কিয়াম, রুকু ও সুজুদসহ একটি রাকাত।

সহজ ভাষায় সারমর্ম, ‘ইমামের সঙ্গে অন্তত এক পূর্ণ রাকাত শরিক না হলে জামাত অর্জিত হয় না।’


ইজমা (ঐকমত্য)-এর কথা বলতে গিয়ে হজরত ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন—

أجمعوا على أن من لم يدرك ركعة لم يدرك الجماعة

‘আলেমরা একমত হয়েছেন- যে ব্যক্তি একটি রাকাতও পায়নি, সে জামাতে শরিক হয়নি।’ (ইবনুল মুনযির, পৃষ্ঠা ৩৮)

তবে অনেক ইসলামিক স্কলারের মতে, যদি কেউ জামাতের শেষ বৈঠকের সালাম ফেরানোর আগে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজের বৈঠকে অংশগ্রহণ করে তবে তিনি নামাজে ইমামের সঙ্গে শরীক হয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম