Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

বাবা-মা কীভাবে জান্নাতে প্রবেশের প্রথম দরজা?

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম

বাবা-মা কীভাবে জান্নাতে প্রবেশের প্রথম দরজা?

ছবি: সংগৃহীত

মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার কেবল একটি দায়িত্ব নয় বরং এটি এমন একটি ইবাদত, যা বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয় এবং জীবনে বরকত ঢেলে দেয়। তাদের সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লুকিয়ে আছে, আর তাদের কষ্টের মধ্যেই রয়েছে ধ্বংসের কারণ। মা-বাবার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত। শৈশবে আমাদের দুর্বলতা যেমন তারা আগলে রেখেছেন, বার্ধক্যে তাদের দুর্বলতার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। এ দায়িত্ব পালন করতে পারলেই কেবল মা-বাবা আমাদের জন্য জান্নাতের প্রথম দরজা। যা কুরআন-হাদিসের বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।

কুরআনে মা-বাবার মর্যাদা

তাওহিদের পরেই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো মা-বাবার হক আদায় করা। আল্লাহ তাআলা নিজের ইবাদতের পরপরই মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন—

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

‘তোমার রব আদেশ দিয়েছেন— তোমরা তাকে ছাড়া কারও ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সুরা আল-ইসরা: আয়াত ২৩)

বার্ধক্যে মা-বাবার প্রতি সন্তানের আচরণ কেমন হবে? একটি ‘উফ্’ শব্দ— যা আমাদের কাছে তুচ্ছ কিন্তু আল্লাহর কাছে সেটিও বড় অপরাধ। কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন—

فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

‘তাদের প্রতি ‘উফ্’ শব্দটিও বলবে না, ধমক দেবে না; বরং সম্মানজনক কথা বলবে।’ (সুরা আল-ইসরা: আয়াত ২৩)

মা-বাবার জন্য দোয়া: সন্তানের শ্রেষ্ঠ উপহার

মা-বাবা জীবিত থাকুক বা না থাকুক— তাদের জন্য দোয়া কখনো বন্ধ করা যাবে না। কীভাবে দোয়া করতে হবে— তা-ও শিখিয়েদিয়েছেন মহান রব। আল্লাহ তাআলা বলেন—

 رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ: ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সাগিরা।’

অর্থ: ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন করে তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা আল-ইসরা: আয়াত ২৪)

হাদিসে মা-বাবার সন্তুষ্টির গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ (সা.) মা-বাবাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম বানিয়েছেন। তিনি বলেছেন—

رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ

‘বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি ১৮৯৯)

জান্নাতে প্রবেশের সহজ দরজা

মা-বাবা সন্তানের জন্য  জান্নাতে প্রবেশের সহজ রাস্তা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ الْبَابَ أَوِ احْفَظْهُ

‘জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙ্গে ফেলতে পার অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণও করতে পার।’ (তিরমিজি ১৯০০)

মা-বাবার অবাধ্যতার ভয়াবহ পরিণতি

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ‏"‏‏.‏ قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ قَالَ ‏"‏ الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ

‘আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললাম, অবশ্যই সতর্ক করবেন- হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার গণ্য করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা।’ (বুখারি ৫৯৭৬)

মা-বাবার খেদমত যে কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ

> রিজিকে বরকত আসে

> আয়ু বাড়ে (বরকতময় অর্থে)

> দোয়া কবুল হয়

> সন্তানদের মধ্যেও সেই আচরণ ফিরে আসে

> কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা

মা-বাবা— এই দুনিয়ার জীবন্ত জান্নাত। মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার কোনো সাময়িক আবেগ নয়; এটি আজীবনের ভালোবাসা ও ইবাদত। আজ যারা মা-বাবার সেবা করছে—

তারা দুনিয়াতেই জান্নাতের স্বাদ পাচ্ছে। আর যারা অবহেলা করছে— তারা জানে না, কত বড় নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে— মা-বাবা বেঁচে থাকতেই জান্নাত কামাতে হয়। কারণ, কবরের পর আফসোস কোনো কাজে আসবে না। জীবিত কিংবা মৃত সর্বাবস্থায় তাদের জন্য দোয়া করতে হবে এভোবে—

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِوَالِدِينَا وَارْحَمْهُمَا

‘হে আল্লাহ! আমাদের মা-বাবাকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি দয়া করুন।’ আমিন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম