কোন কোন খাবার মানুষের শরীরে সুগন্ধ এবং দুর্গন্ধ তৈরি করে?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০২ পিএম
রসুন, মাংস, সবজি কিংবা দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস—অনেক কিছুই আমাদের শরীরের ঘ্রাণকে বদলে দিতে পারে।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রসুন, মাংস, সবজি কিংবা দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস—অনেক কিছুই আমাদের শরীরের ঘ্রাণকে বদলে দিতে পারে। এমনকি উপবাস বা ফাস্টিং করলেও শরীরের নিঃশ্বাস ও ঘামের গন্ধে পরিবর্তন আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি মানুষের মতো শরীরের ঘ্রাণও পুরোপুরি অনন্য। ব্যক্তিত্ব, হরমোন, মানসিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যগত দিক মিলেই তৈরি হয় একজন মানুষের স্বতন্ত্র বডি-অডর।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব স্টারলিংয়ের সোশ্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক ক্রেইগ রবার্টসের ভাষায়, গত কয়েক দশকের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে—জিন, হরমোন, স্বাস্থ্য ও হাইজিন মিলে তৈরি হয় আমাদের শরীরের ঘ্রাণ। বয়স, লিঙ্গ বা শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনও এতে ভূমিকা রাখে।
এর অনেক কারণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে হলেও খাদ্যাভ্যাস এমন এক বিষয় যা সরাসরি ঘ্রাণকে প্রভাবিত করে। আমরা যা খাই, তা শুধু ঘামের গন্ধ বদলায় না; বরং অন্যের কাছে আমাদের আকর্ষণীয় মনে হবার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।
খাদ্য কীভাবে শরীরের ঘ্রাণ বদলায়?
নিউইয়র্কের বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানান, খাবার দুটি উপায়ে ঘ্রাণে প্রভাব ফেলে—পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে এবং ত্বকের ঘামের মাধ্যমে। হজমের সময় খাবারের রাসায়নিক যৌগ ভেঙে গ্যাস তৈরি করে, যা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে—যাকে বলে হ্যালিটোসিস। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন।
অন্যদিকে, খাবারের কিছু যৌগ রক্তের মাধ্যমে ত্বকে পৌঁছে ঘামে বের হয়। ঘামের নিজস্ব গন্ধ নেই; তবে ঘাম যখন ব্যাকটেরিয়ার সাথে মেশে, তখনই দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
সালফারযুক্ত খাবার: রসুন–পেঁয়াজ–সবজি
ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট—সবগুলোতেই সালফারের উপস্থিতি বেশি। তাই এদের খাওয়ার পর ঘামে তীব্র গন্ধ তৈরি হয়। রসুন, পেঁয়াজও একইভাবে দেহগন্ধ বাড়ায় কারণ এগুলো হজমের পর ডাইঅ্যালাইল ডিসালফাইডের মতো যৌগ তৈরি করে।
মজার বিষয়, গবেষণা বলছে—রসুন মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করলেও ঘামের গন্ধকে কিছু ক্ষেত্রে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেশি রসুন খাওয়া পুরুষদের ঘ্রাণ নারীরা বেশি পছন্দ করেছেন।
ফল ও সবজি: ঘ্রাণে ইতিবাচক প্রভাব
২০১৭ সালের অস্ট্রেলিয়ান এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি ফল ও সবজি খান তাদের শরীর থেকে বেশি মনোরম, মিষ্টি ও আকর্ষণীয় গন্ধ পাওয়া যায়। কারণ এসব খাবারের ক্যারোটিনয়েড যৌগ ত্বক ও ঘ্রাণ—উভয় ক্ষেত্রেই সৌন্দর্য বাড়ায়।
মাংস ও মাছ
মাংস ও মাছ খেলে শরীর দৃষ্টিকটু গন্ধ ছড়াতে পারে। কারণ প্রাণিজ প্রোটিন ভেঙে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়, যা ঘামে বেরিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
এক বিরল জিনগত সমস্যায় (ট্রাইমিথাইলামিনুরিয়া), মাছ খাওয়ার পর শরীর থেকে পচা মাছের মতো গন্ধও বের হতে পারে।
২০০৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দুই সপ্তাহ মাংসবিহীন খাদ্য গ্রহণ করেছিলেন তাদের ঘাম আরও আকর্ষণীয় ও কম তীব্র ছিল।
কফি, চা ও মদ্যপান
অ্যালকোহল ভেঙে তৈরি হওয়া অ্যাসিটালডিহাইড শরীর থেকে তীব্র গন্ধ ছড়ায়। এতে নিঃশ্বাসও বেশি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে ওঠে। কফি ও চায়ের ক্যাফেইন ঘামগ্রন্থি উদ্দীপিত করে, যা শরীরের দুর্গন্ধ বাড়াতে পারে।
উপবাস বা ফাস্টিং
মজার বিষয়, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে—ফাস্টিং করা নারীদের ঘাম স্বাভাবিক খাবার খাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে। যদিও এটি সব পরীক্ষায় একইভাবে পাওয়া যায়নি। তবে উপবাসে নিঃশ্বাস সাধারণত আরও দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
শেষ কথা
গবেষকরা বলছেন—খাদ্য শরীরের ঘ্রাণে বড় ভূমিকা রাখে, তবে সুনির্দিষ্ট ফলাফল সবসময় একই থাকে না। তবু পরিষ্কার—যে খাবারই হোক, তার প্রভাব শরীরের ঘ্রাণে পড়বেই, আর সেই ঘ্রাণই অন্যের কাছে আমাদের আকর্ষণীয়তা বাড়াতেও পারে, কমাতেও পারে।

