|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আক্কেল দাঁত ওঠার সময় অনেকের জন্য তীব্র যন্ত্রণা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারও ক্ষেত্রে আবার এই দাঁত তুলে ফেলাও জরুরি হয়ে পড়ে। মুখের ভেতরে ভুল অবস্থানে আক্কেল দাঁত উঠলে ব্যথা, সংক্রমণ, ক্যাভিটি বা পাশের দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে দাঁত অপসারণ ছাড়া উপায় থাকে না। তবে কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলকভাবে আক্কেল দাঁত তুলে ফেলা উচিত কি না—এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে।
অনেকে ধারণা করেন, আক্কেল দাঁতের সঙ্গে জ্ঞান বা বুদ্ধির সম্পর্ক আছে। বাস্তবে এর সঙ্গে এমন কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণত ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে উপরের ও নিচের চোয়ালের তৃতীয় মোলার দাঁতগুলো ওঠে, যেগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘থার্ড মোলার টুথ’। সাধারণত এ ধরনের দাঁত চারটি হয়ে থাকে।
সব দাঁত ওঠার সময় ব্যথা না হলেও আক্কেল দাঁত উঠতে গিয়ে অনেকের ব্যথা অনুভূত হয়। কারণ প্রতিটি দাঁত ওঠার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা প্রয়োজন। চোয়াল ছোট হওয়া, অতিরিক্ত দাঁতের উপস্থিতি বা দাঁতের অবস্থান সঠিক না হলে জায়গার সংকট দেখা দেয়। ফলে দাঁত ওঠার সময় আশপাশে চাপ সৃষ্টি হয়ে ব্যথা হয়। অনেক সময় এই ব্যথা সহনীয় থাকলেও সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তখন দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
যেকোনো দাঁত তোলার ক্ষেত্রেই যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন। অল্প বয়সে বা অপ্রয়োজনে দাঁত তুলে ফেললে ভবিষ্যতে দাঁত আঁকাবাঁকা হওয়া, ঠিকমতো দাঁত না ওঠা কিংবা চোয়ালের জায়গা সংকুচিত হওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছালে, সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকলে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দাঁত তোলা যেতে পারে।
আক্কেল দাঁত উঠতে সমস্যা হলে, সংক্রমণ বা প্রদাহ দেখা দিলে, পর্যাপ্ত জায়গার অভাব থাকলে কিংবা সিস্ট বা টিউমার শনাক্ত হলে সাধারণত দাঁত তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দাঁত তোলার দুটি পদ্ধতি রয়েছে—সার্জিকাল ও নন-সার্জিকাল। রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জন প্রয়োজনীয় পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চললে অপারেশনের পরবর্তী জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
কিছু ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত তুলতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। দাঁতের গঠন অস্বাভাবিক হলে, সাধারণ পদ্ধতিতে দাঁত তোলা সম্ভব না হলে কিংবা দাঁত আংশিক বা পুরোপুরি মাড়ি বা চোয়ালের হাড়ের ভেতরে আটকে থাকলে সার্জারি করতে হয়। এ সময় সার্জারির আগে ও পরে চিকিৎসকের সব নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দাঁত তোলার পর সাধারণত ২৪ ঘণ্টা নরম খাবার খাওয়া, গরম খাবার এড়িয়ে চলা, লবণ পানিতে কুলকুচি বা মাউথওয়াশ ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে বেশিরভাগ সমস্যাই সেরে যায়। সার্জারির ক্ষেত্রে কিছুদিন মুখ পুরোপুরি হা করা বা জোরে হাসা নিষেধ করা হয়, কারণ এতে সেলাই খুলে যাওয়া বা পুনরায় রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

