জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় কপ২৬ কতটা ভূমিকা রাখবে?
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক যে রিও ডি জেনেইরো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে ইউনাইটেড নেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ (ইউএনএফসিসি) নামে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৪ সালে ইউএনএফসিসি’র মাধ্যমে ‘কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস’ (কপ) গঠিত হয়। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। প্রতি বছর এ সংগঠনের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বৃহৎ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কপ২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রথম চুক্তিটি ‘কিয়োটো প্রোটোকল’ নামে পরিচিত। ওই প্রোটোকলে ৩৬টির বেশি শিল্পোন্নত ও ইউরোপিয়ান দেশ বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নির্গমন কমানোর বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৯৭টি দেশ কপে স্বাক্ষর করেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২১ সালে কপ২৭ সম্মেলনের পরিবর্তে কপ২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রোটোকল অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো ২০২১ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নির্গমন কমানোয় অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। ওই সম্মেলনের শর্ত অনুযায়ী আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানোর ব্যাপারে বিশ্বের নেতারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন। গ্লাসগোতে চলমান সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। এ আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বের নেতাদের আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। দাবানল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। ফলে উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সমগ্র বিশ্ব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো, আফ্রিকার সাব সাহারা এবং বাংলাদেশের মতো বহু দেশ ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সমুদ্রের পানির উচ্চতাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্ষতির পাশাপাশি কোটি কোটি মানুষের অন্যত্র স্থানান্তরের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জাতিসংঘের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ মোট ৪৯টি দেশ বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছে। যদিও বর্তমানে এ দেশগুলো বিশ্বের অর্ধেকের বেশি গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। অন্যদিকে এসব দেশ জিডিপিতেও সমগ্র বিশ্বে ৫০ শতাংশ অবদান রেখে যাচ্ছে। আবার বিশ্বের অনেকেই কার্বন নির্গমন হ্রাসে এ উন্নত দেশগুলোর ভূমিকাকে অস্পষ্ট বলেছেন। চলমান কপ২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ভারত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ ১০০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রনায়করা কপ২৬ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান ও মেক্সিকো কপ২৬ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ২৬-এ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, শ্রীলংকা ও কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসেছেন।
যা হোক, কপ২৬ সম্মেলনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রকৃতি সংরক্ষণ, জিরো কার্বন নির্গমনের যানবাহন ও গবেষণায় অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে রাষ্ট্রপ্রধান ও বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। উন্নত দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কীভাবে সমাপ্তি টানবে, সে বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোও কয়লা থেকে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে এক দেশ আরেক দেশকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এবং জ্বালানির ইফিসিয়েন্সি বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণ ছাড়া জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ সম্ভব নয়। কপ২৬-এ প্রকৃতি সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ ও টেকসই কৃষির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভূমি ও সমুদ্র সংরক্ষণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
যানবাহন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কাজের গতি বৃদ্ধি করে থাকে। যানবাহন ছাড়া মানবজাতি অনেকটাই অচল। যানবাহনকে কীভাবে পরিবেশবান্ধব করা যায়, সে বিষয়ও কপ২৬-এর আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বনেতারা আশা করছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে জিরো কার্বন নির্গমনের যানবাহন উন্নত দেশের বাজারে পাওয়া যাবে। তারা আরও আশা করছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে জিরো কার্বন নির্গমনের বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার পাওয়া যাবে, যা সমগ্র বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সেই লক্ষ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০৩৫ সালে অথবা এর আগে থেকেই জিরো কার্বন নির্গমনের গাড়ি বাজারজাত করবে। কপ২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিজ্ঞানী, রাজনীতিক ও বিনিয়োগকারীদের একত্রে কাজ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পেয়েছে। যদি বিনিয়োগকারীরা একাডেমিকদের সঙ্গে যুগ্মভাবে কাজ করে, তাহলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যদিও কপ১৫ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ প্রতিশ্রুতি খুব একটা কার্যকর হয়নি। কপ২৬-এ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় বাজেটের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।
করোনার মহামারিতে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক রোগের বিস্তার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়ছে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ, সাইক্লোন ও বনায়ন হ্রাস প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। শিল্পায়নে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মিটাতে কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের আবির্ভাবও ঘটেছে। যদিও খাদ্য চাহিদা পূরণে উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম; তবুও জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট পরিবেশের বিপর্যয়কে গুরুত্ব দিয়ে ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখা উচিত। ফসলের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অনুজীবজনিত বায়োফার্টিলাইজার ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, ভবিষ্যতে উপকূলীয় অঞ্চলের তিন ভাগের এক ভাগ সমুদ্রের পানি দ্বারা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এ চিত্রটি আগামী ৩০ বছরের মধ্যে দেখা যায়, তাহলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষগুলো অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হবে। এর ফলে স্থানান্তরিত এলাকায় খাদ্য, পানি ও বাসস্থানের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে, যা বাস্তবে সমাধান করা অনেকটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট খাদ্য চাহিদার ওপর প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ফসলের বীজ সংরক্ষণের ওপরও প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাবে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকদের অধিক উৎপাদনশীল ফসলের জাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বীজ কোম্পানি কর্তৃক ফসলের বীজ প্রতিনিয়ত আমদানি হচ্ছে। ওই বীজ থেকে উৎপাদিত ফসলের জাত সংরক্ষণ করা বাস্তবে অসম্ভব। অন্যদিকে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পাচ্ছে, যা পরিবেশের বিপর্যয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
এ প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্ব নেতারা গ্লাসগোতে সমবেত হয়েছেন। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, তারা কপ২৬ সম্মেলনে প্রকৃতি সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জিরো কার্বন নিঃসরণের যানবাহন ও কোলাবোরেটিভ গবেষণার ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কার্বন নিঃসরণ কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাজেটের নিশ্চয়তা ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্যের বিষয়ে বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছেন। কপ২৬ সম্মেলনে প্রস্তাবিত এজেন্ডা অনুযায়ী বিশ্বের সব নেতারই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া উচিত। বিশ্ব নেতাদের অঙ্গীকারনামায় প্রথমত অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর কার্বনের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা উচিত। দ্বিতীয়ত, ওই লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতি বছর কপ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর কার্বনের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা উচিত। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় শতাংশ হারে বছরে ক্ষতির মাত্রা কমানোর একটি তালিকা পরবর্তী কপ সম্মেলনে উপস্থাপন করা উচিত। চতুর্থত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো সহনশীল মূল্যে উন্নয়নশীল দেশে স্থানান্তর করা উচিত। পঞ্চমত, কম কার্বন নিঃসরণকারী গাড়ি বিশ্বের প্রতিটি দেশে সহনশীল মূল্যে বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা প্রদান করা উচিত। ষষ্ঠত, টেকসই কৃষির উন্নয়নে অনুজীবজনিত সার ও সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া উচিত। সপ্তমত, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গবেষণার ওপরও জোর দেওয়া উচিত। পরিশেষে, জলবায়ু সম্মেলনে প্রস্তাবিত এজেন্ডা অনুযায়ী যদি বিশ্বের সব দেশ একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর আওতায় আসে, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
mohammad.alam@wsu.edu