সমাবর্তনের সমতলে গ্র্যাজুয়েটদের মিলনমেলা
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের দিনগুলোতে ফিরে যেতে সক্ষম হন। সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, গ্র্যাজুয়েশন ক্যাপটি মাথায় সমতলভাবে বসাতে হবে। দ্বিতীয়ত, মুখের বাঁ পাশে ক্যাপের সঙ্গে ঝুলন্ত ট্যাসেলটি সুন্দরভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে হাঁটার সময় অথবা মঞ্চে ওঠার সময় মুখটি ঢেকে না যায়। তৃতীয়ত, সমাবর্তন শোভাযাত্রায় হাঁটার সুবিধার্থে আরামদায়ক জুতা পরা উচিত, যাতে কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ও নিচে নামতে সমস্যা না হয়। তাছাড়া মঞ্চ অতিক্রমের সময় স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে তা সাহায্য করে। চতুর্থত, পিএইচডি প্রার্থী না হলে গাউনটির জিপ বন্ধ থাকে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান দীর্ঘ হতে পারে; তাই আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক পরা উচিত।
‘সমাবর্তন’ শব্দটি ল্যাটিন ‘কনভোকেয়ার’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ একত্রে আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েটরা ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে একত্রিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবর্তনে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ সভাপতি হিসাবে উপস্থিত হয়ে গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করেন। ওই সমাবর্তনে প্রায় ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তন বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জিন টাইরল। ওই সমাবর্তনে ড. টাইরলকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছিল।
আগামীকাল ১৩ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চতুর্থ সমাবর্তন’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এ সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সভাপতি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় একটি ব্যতিক্রমী সাজে সাজবে, যাতে ছাত্র-শিক্ষক সবার কাছে তা স্মরণীয় হয়ে থাকে। শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন মূলত শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রা শেষে সভাপতি মঞ্চে উঠে নিজ আসনের সামনে দাঁড়ানোর পর জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। রীতি অনুযায়ী এর ঠিক পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন। পরে বিভিন্ন অনুষদের ডিন গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদানের জন্য মাননীয় সভাপতি বরাবর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাব উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে গ্র্যাজুয়েটদের দাঁড়ানোর রীতি প্রচলিত আছে। এভাবে বিভিন্ন অনুষদের ডিন তাদের গ্র্যাজুয়েটদের একের পর এক পর্যায়ক্রমে সভাপতি বরাবর ডিগ্রি প্রদানের জন্য উপস্থাপন করবেন। পরিশেষে মাননীয় সভাপতি ডিন কর্তৃক উপস্থাপিত গ্র্যাজুয়েটদের আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি প্রদান করবেন। বিষয়টি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক ও আনন্দদায়ক।
সমাবর্তন গ্র্যাজুয়েটদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও সম্মানজনক। সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যেও গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের অতীতের স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। আবার নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর বিষয়গুলো উল্লেখ করে থাকেন। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তন বক্তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণামূলক অনেক কিছু জানতে পারে। সমাবর্তন বক্তা নির্বাচনের সময় তাই বিশেষ ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্যের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আবার উপস্থিত বিশেষ অতিথিরাও গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথি, সমাবর্তন বক্তা, উপাচার্য ও সভাপতির মধ্যে ক্রেস্ট বিনিময়ের মাধ্যমে সমাবর্তনের সমাপ্তি হতে পারে। সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘটে থাকে। সভাপতিও সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। যেহেতু সম্মানিত ব্যক্তিরা সমাবর্তনে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করে থাকেন, সেহেতু বাস্তব জীবনে সফলতার পেছনে অনেক ব্যর্থতার বিষয়ও গ্র্যাজুয়েটদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হন। সেক্ষেত্রে বক্তব্য দেওয়ার সময় নিজের বাস্তব জীবনের সফলতার উদাহরণের পাশাপাশি বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সফলতার উদাহরণও গ্র্যাজুয়েটদের সামনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থাপন করা হয়। গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে নিজের বর্তমান অবস্থান যাচাই-বাছাই ছাড়াও ভবিষ্যতের জন্য করণীয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। সেক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েটরা ভবিষ্যতে বিখ্যাত ব্যক্তিদের পর্যায়ে পৌঁছাতে নিজেদের করণীয় বিষয়গুলো সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।
‘সমাবর্তন’ গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি অর্জনের একটি মিলনমেলা। সব গ্র্যাজুয়েট বিশেষ পোশাকে সজ্জিত হয়ে আচার্যের/বিখ্যাত ব্যক্তিদের হাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েটদের কাছে সনদপত্র বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে; যদিও বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সমাবর্তন ছাড়াও সনদপত্র বিতরণ করা হয়ে থাকে। পরিশেষে বলতে চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে নিয়মিত সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদপত্র বিতরণ করা উচিত। এতে সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি গ্র্যাজুয়েটদের কাছে ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ও কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার বাহক হিসাবে কাজে লাগবে বলে মনে করি।
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম : বিভাগীয় প্রধান, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
mohammad.alam@wsu.edu