Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ইসলামে হত্যা, গুম ও খুনের সাজা কী?

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

ইসলামে হত্যা, গুম ও খুনের সাজা কী?

গুমের প্রতীকী ছবি

মুসলিম সমাজে আজকাল তুচ্ছ ও নগণ্য কারণে ইচ্ছাকৃত নরহত্যা, গুপ্তহত্যা, অপহরণ, গুমসহ জঘন্য অপরাধ ঘনঘন ঘটছে। শত অপরাধের ভিড়েও কিছু কিছু অপরাধ এতটাই জঘন্য ও ভয়াবহ যে কোনো মুমিনের পক্ষ থেকে তার সংঘটন কল্পনাই করা যায় না। অন্যায়ভাবে এসব অপরাধ—ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনের পক্ষে এ গর্হিত কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে অন্যায়ভাবে নরহত্যা, গুপ্তহত্যা, অপহরণ, গুমকে অত্যন্ত ভয়াবহ গুনাহ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।  আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ مَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ اَنْ يَّقْتُلَ مُؤْمِنًا اِلَّا خَطَـًٔا

‘এটা কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না যে, সে (ইচ্ছাকৃত) কোনো মুমিনকে হত্যা করবে। ভুলবশত এরূপ হয়ে গেলে সেটা ভিন্ন কথা।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ৯২)

ইসলামে নরহত্যা, গুপ্তহত্যা, অপহরণ, গুমসহ সব ধরনের চরমপন্থা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মানবজীবন রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী বহু জাতি এ–জাতীয় অপরাধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই সাময়িক উত্তেজনা বা আবেগের বশে মানুষকে অপহরণ, গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ বা পুড়িয়ে হত্যার মতো নৃশংসতা অবলম্বনের কোনো সুযোগ ইসলামে নেই।

কারো প্রাণনাশ করা সামাজিক অনাচার ও চরম অত্যাচারের শামিল। প্রতিশোধ কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে, তারা মানবতা থেকে বিচ্যুত ও সভ্য সমাজের শত্রু। তাদের কাজের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। নরহত্যা যে মহাপাপ—তা তারা অনুধাবনই করতে পারে না। নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির মতো ভয়াবহ অন্যায় করতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধাও অনুভব করে না। পবিত্র কুরআনে নরহত্যাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে-

وَ لَا تَقۡتُلُوا النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالۡحَقِّ ؕ وَ مَنۡ قُتِلَ مَظۡلُوۡمًا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِیِّهٖ سُلۡطٰنًا فَلَا یُسۡرِفۡ فِّی الۡقَتۡلِ ؕ اِنَّهٗ كَانَ مَنۡصُوۡرًا

‘আর আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না! কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমরা তার প্ৰতিকারের অধিকার দিয়েছি; কিন্তু হত্যা ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না। করে; সে তো সাহায্যপ্ৰাপ্ত হয়েছেই।’ (সূরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৩৩)

তাফসিরে আহসানুল বয়ানে এ আয়াতে ব্যাখ্যায় এসেছে-

যথার্থ কারণে হত্যা: যেমন হত্যার বদলে হত্যা করা। যাকে মানুষের জীবন এবং নিরাপত্তার ও শান্তির কারণ গণ্য করা হয়েছে। অনুরূপ বিবাহিত ব্যভিচারীকে এবং মুরতাদ (ধর্মত্যাগী)-কে হত্যা করার নির্দেশ আছে। নিহতের উত্তরাধিকারীদের এ অধিকার বা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, তারা হত্যাকারীকে ক্ষমতাসীন শাসক কর্তৃক শরিয়তী ফায়সালার পর খুনের বদলে খুন নিয়ে তাকে হত্যা করবে অথবা তার কাছ থেকে মুক্তিপণ নেবে কিংবা তাকে ক্ষমা করে দেবে। আর যদি খুনের বদলে খুনই করতে চায়, তবে তাতে যেন বাড়াবাড়ি না করে। অর্থাৎ একজনের পরিবর্তে দুজনকে যেন হত্যা না করে অথবা তার যেন অঙ্গবিকৃতি না ঘটায় অথবা নানা কষ্ট দিয়ে যেন তাকে হত্যা না করে। নিহতের ওয়ারেস ‘সাহায্যপ্রাপ্ত’ অর্থাৎ, নেতা ও শাসকদেরকে তার সাহায্য করার তাকীদ করা হয়েছে। কাজেই এর জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। বাড়াবাড়ি করে তার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত নয়।

সূরা ফুরকান-এ আল্লাহর সঙ্গে শিরকের নিষেধাজ্ঞার পরই অন্যায়ভাবে হত্যাকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ الَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَ لَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ وَ لَا يَزْنُوْنَ وَ مَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا، يُّضٰعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ وَ يَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا.

আর (আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ হল,) যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো মাবুদের ইবাদত করে না এবং আল্লাহ যে প্রাণকে (হত্যা করা) হারাম করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তিই এরূপ (অপরাধ) করবে, তাকে তার গুনাহের (শাস্তির) সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করা হবে এবং সে লাঞ্ছিত অবস্থায় তাতে সদা-সর্বদা থাকবে।’ (সুরা ফুরকান: আয়াত ৬৮-৬৯)

উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে হত্যাকাণ্ডকে সুস্পষ্ট হারাম বলা হয়েছে। আর এর শাস্তি যে কত ভয়াবহ তাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে।

হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে করলে হয় প্রকাশ্য হত্যা, আর গোপনে করলে হয় গুপ্তহত্যা। উভয় হত্যাকাণ্ডের শাস্তি একই—মৃত্যুদণ্ড। প্রকাশ্যে বা গোপনে যেভাবেই হোক, হত্যাকারীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। যদি সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে দুনিয়ার আদালতে এর ন্যায়বিচার করতে হবে। নতুবা তাকে আখেরাতের আদালতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। পবিত্র কুরআনে হত্যাকাণ্ডকে মহাপাপ সাব্যস্ত করে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জাহান্নামে শাস্তির কঠোর বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-

وَ مَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡهَا وَ غَضِبَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ وَ لَعَنَهٗ وَ اَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا 

‘আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ৯৩)

হত্যাকাণ্ডের শাস্তি

ভয়ানক নরহত্যার মতো জঘন্যতা ও হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিস শরিফে ওঠে এসেছে। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

خَرَجَتْ جَارِيَةٌ عَلَيْهَا أَوْضَاحٌ فَأَخَذَهَا يَهُودِيٌّ فَرَضَخَ رَأْسَهَا بِحَجَرٍ وَأَخَذَ مَا عَلَيْهَا مِنَ الْحُلِيِّ ‏.‏ قَالَ فَأُدْرِكَتْ وَبِهَا رَمَقٌ فَأُتِيَ بِهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏"‏ مَنْ قَتَلَكِ أَفُلاَنٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ بِرَأْسِهَا لاَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَفُلاَنٌ ‏"‏ ‏.‏ حَتَّى سُمِّيَ الْيَهُودِيُّ فَقَالَتْ بِرَأْسِهَا أَىْ نَعَمْ ‏.‏ قَالَ فَأُخِذَ فَاعْتَرَفَ فَأَمَرَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرُضِخَ رَأْسُهُ بَيْنَ حَجَرَيْنِ

‘একটি বালিকা গহনা পরে বাড়ির বাইরে গেলে একজন ইয়াহুদি তাকে ধরে নিয়ে পাথর দ্বারা আঘাত করে তার মাথা থেতলিয়ে দেয় এবং তার গহনা ছিনিয়ে নেয়। তাকে মুমূর্যু অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আনা হয়। সে মুহুর্তেও তার মধ্যে জীবনের স্পন্দন অবশিষ্ট ছিল। তিনি প্রশ্ন করেন- কে তোমাকে হত্যা করেছে, অমুক লোক কি? সে মাথার ইশারায় বলল, না। তিনি আবার প্রশ্ন করেন- তাহলে কি অমুক লোক? এভাবে তিনি নাম উচ্চারণ করতে করতে বললেন- অমুক ইয়াহুদি? সে মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে (সেই ইয়াহুদিকে) ধরে আনা হলে সে ঘটনার স্বীকারোক্তি করল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে তার মাথা দুই পাথরের মাঝে রেখে থেতলিয়ে দেওয়া হল।’ (তিরমিজি ১৩৯৪)

لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ

‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি: ১৩৯৫)

তাছাড়া কেয়ামতের দিন সবার আগে নরহত্যার বিচার করা হবে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

 أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ بِالدِّمَاءِ

‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ (বুখারি ৬৫৩৩-৬৮৬৪ ও মুসলিম ১৬৭৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো মুসলিমের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়াকে কুফর আখ্যা দিয়ে ইরশাদ করেছেন-

سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُه كُفْرٌ

‘মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপাচার, আর তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফর।’ (বুখারি ৪৮)

এক মুসলিমের সাথে শুধু লড়াই বা বিবাদে লিপ্ত হওয়াই যদি কুফর হয়, তাহলে তাকে হত্যা করা যে কত কঠিন গুনাহের কাজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিনা অপরাধে একজন নিরীহ মানুষকেও হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। যখনই কেউ অবৈধ হত্যায় লিপ্ত হবে, তার ওপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে যাবে। আল্লাহ তাআলা সবার গুনাহ ক্ষমা করলেও হত্যাকারীকে ক্ষমা করবেন না। নবী করিম (সা.) বলেছেন-

لَنْ يَزَالَ الْمُؤْمِنُ فِي فُسْحَةٍ مِنْ دِينِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا

‘একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়।’ (বুখারি)

হত্যাকারী তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত

হত্যা এমন অপরাধ, যা তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। হত্যা কতটা ভয়াবহ অপরাধ, তা নিম্নের হাদিস থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠেছে। হযরত আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি-

كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى اللهُ أَنْ يَغْفِرَه، إِلّا مَنْ مَاتَ مُشْرِكًا، أَوْ مُؤْمِنٌ قَتَلَ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا.

‘আল্লাহ (চাইলে) সব গুনাহই ক্ষমা করবেন; কিন্তু মুশরিক অবস্থায় কেউ মারা গেলে অথবা ঈমানদার ব্যক্তি অপর কোনো ঈমানদারকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে (তা ক্ষমা করবেন না)।’ (আবু দাউদ ৪২৭০, নাসায়ি ৩৯৮৪

অপর হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.)ইরশাদ করেন-

 يَجِيءُ المَقْتُولُ بِالقَاتِلِ يَوْمَ القِيَامَةِ نَاصِيَتُه وَرَأْسُه بِيَدِه وَأَوْدَاجُه تَشْخَبُ دَمًا، يَقُولُ : يَا رَبِّ! قَتَلَنِي هذَا، حَتّى يُدْنِيَه مِنَ العَرْشِ، قَالَ: فَذَكَرُوا لِابْنِ عَبَّاسٍ التّوْبَةَ، فَتَلَا هذِهِ الْآيَةَ: وَ مَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا قَالَ: مَا نُسِخَتْ هذِه الْآيَةُ، وَلَا بُدِّلَتْ، وَأَنّى لَهُ التّوْبَةُ

‘খুন হওয়া ব্যক্তি খুনীকে সঙ্গে করে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবে। নিহত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে। সে বলবে, হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এভাবে সে হত্যাকারীকে আরশের অতি কাছে নিয়ে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা হত্যাকারীর তওবা সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে প্রশ্ন করলে তিনি সুরা নিসার আয়াত-

وَ مَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡهَا وَ غَضِبَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ وَ لَعَنَهٗ وَ اَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا 

‘আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ৯৩)

-পাঠ করলেন এবং বললেন, উক্ত আয়াত রহিত হয়নি, পরিবর্তনও হয়নি। তিনি বলেন, তার তওবার সুযোগ কোথায়?’ (তিরমিজি ৩০২৯, নাসায়ি ৪৮৬৬)

একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পাবার সর্বশেষ সুযোগ হল, আল্লাহর কাছে অন্তর থেকে মাফ চাওয়া, তওবা করা। মুমিন যত বড় অন্যায় ও পাপকর্মই করুক না কেন, অন্তর থেকে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু হত্যার ভয়াবহতা এতটাই জঘন্য যে, হত্যাকারী সেই মহা নিআমত তওবা থেকেই বঞ্চিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এত বড় হুমকির পরও কি কোনো মুমিনের পক্ষে সম্ভব অন্য কোনো মুমিন-মুসলিমকে হত্যা করা?

তাছাড়া অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা তো বান্দার হক। যথানিয়মে হক আদায় করা বা বান্দা মাফ করা ছাড়া আল্লাহ কিছুতেই বান্দার হক মাফ করবেন না।

সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাকে ইসলামে হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। এ প্রেক্ষাপটে দেশের আলেম সমাজ, ধর্মীয় নেতা, মসজিদের ইমাম ও খতিবদের উচিত—অপহরণ, গুম, হত্যা ও গুপ্তহত্যার মতো নৃশংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। নিরীহ মানুষকে অপহরণ, গুম, হত্যা ও গুপ্তহত্যা সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ করার লক্ষ্যে ইসলামের নির্দেশনা ভিত্তিক প্রচারণামূলক কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম