মা–বাবা: সন্তানের জীবনের প্রথম জান্নাতের ঠিকানা
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক মুহূর্ত থেমে ভাবুন— এই পৃথিবীতে আমাদের জন্য সবচেয়ে নির্মল ভালোবাসা কার? কে বিনিময়ের আশা না করে সারাজীবন আমাদের জন্য ত্যাগ করেন? কার দোয়ায় পালটে দিতে পারে সন্তানের ভাগ্য? তারা হলেন— মা ও বাবা। তাদের স্নেহ, কান্না, পরিশ্রম আর দোয়ার উপকারিতা অনুধাবন করতে আসলে দীর্ঘ কোনো বক্তব্যের প্রয়োজন নেই; একটি হাদিসই যথেষ্ট। এমন একটি হাদিস, যা শুনলে মনের ভেতর কাঁপন তোলে, চোখে পানি এনে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয়— মা–বাবা শুধু অভিভাবক নন, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির সোপান। মা–বাবার সম্মানে নবীজি (সা.)-এর হাদিসটি হলো-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে—
الـرِّضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ
‘জন্মদাতার (মা-বাবার) সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর জন্মদাতার (মা-বাবার) অসন্তুষ্টিতে অল্লাহর অসন্তষ্টি।’ (তিরমিজি ১৮৯৯)
হাদিসটি ছোট, কিন্তু এর অর্থ এত গভীর যে, পুরো জীবনকে বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। দুনিয়ার হাজার সাফল্য, প্রশংসা কিংবা অর্জন—সবই ব্যর্থ যদি মা–বাবার মন ভেঙে যায়। কারণ তাদের সন্তুষ্টিই হলো প্রকৃত সাফল্যের চাবিকাঠি।
মা–বাবার মর্যাদায় কুরআনের নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা তার ইবাদতের পাশাপাশি মা–বাবার প্রতি বিশেষভাবে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন—
১. সদ্ব্যবহার ও নম্র আচরণের আদেশ
وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوۡ کِلٰهُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡهَرۡهُمَا وَ قُلۡ لَّهُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا
‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উহ্/উফ’বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা।’ (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ২৩)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা একেবারে স্পষ্টভাবে বলেছেন—বার্ধক্যে পৌঁছালে তাদের প্রতি বিরক্তির ‘উহ/উফ’ শব্দটিও করা যাবে না।
২. দোয়া ও বিনয় প্রকাশের আদেশ
وَاخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَةِ…
‘…অনুকম্পায় মা–বাবার প্রতি বিনয়াবনত হও…’
এবং শেখানো হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া—
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِي صَغِيرًا
উচ্চারণ: ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
অর্থ: ‘হে আমার রব! যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন, তুমিও তাদের প্রতি দয়া করো।’ (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ২৪)
আজকের বাস্তবতা—এক হৃদয়বিদারক ছবি
বর্তমান সমাজে যখন মা–বাবাকে অবহেলা, বকা, এমনকি নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়—এটি শুধু অমানবিকই নয়; এটি আখিরাতের জন্য এক ভয়ংকর ক্ষতির ইঙ্গিত। কারণ মা–বাবার মন ভেঙে গেলে আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকেও মানুষ বঞ্চিত হয়ে যায়।
যা আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত
একদিন আমরাও বয়সের ভারে ন্যুব্জ হবো, আমরাও হবো মা–বাবা। তখন যদি আমাদের সন্তানরাও আমাদের প্রতি উদাসীন থাকে—তাহলে কেমন লাগবে? তাই নিজের ভবিষ্যৎ, ঈমান ও আখিরাতের কথা ভেবে হলেও মা–বাবার প্রতি উত্তম আচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক।
মা–বাবার সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়
> তাদের খেদমতে উপস্থিত থাকা
> কোমল ও সম্মানজনক কথাবার্তা বলা
> সামান্য ইশারাতেও সাড়া দেওয়া
> তাদের দুঃখ-চিন্তা ভাগ করে নেওয়া
> তাদের দোয়া নেওয়া
> কোনোভাবেই তাদের কষ্ট না দেওয়া
শেষ কথা, মা–বাবা আমাদের জীবনের প্রথম জান্নাত। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা, তাদের সম্মান করা এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা—এটাই একজন মুসলমানের প্রকৃত সৌভাগ্য। কারণ যে মা–বাবাকে খুশি রাখে, আল্লাহ তাকেই খুশি রাখেন।
