ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানুষের জীবন পথ একেবারে মসৃণ নয়। এই পথে রয়েছে বহু বাঁক, চড়াই-উৎরাই, দুঃখ-বেদনা, ব্যর্থতা আর কষ্টের পাহাড়। কখনো কখনো জীবন এতটা কঠিন হয়ে পড়ে যে মনে হয়- এ অন্ধকার আর কাটবে না, এ দুঃখের শেষ নেই। তবুও মানুষ থেমে থাকে না। সে আবার উঠে দাঁড়ায়, সামনে এগিয়ে যায়। কেন? কারণ তার হৃদয়ে এক অমলিন আশার আলো জ্বলতে থাকে। আল্লাহ তাআলার দেওয়া এক অপূর্ব বার্তা-
اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا
‘নিশ্চয় কষ্টের পরে রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা ইনশিরাহ: আয়াত ৬)
এই আয়াতটি শুধু একটি বাক্য নয় বরং এটি হলো প্রতিটি কষ্টগ্রস্ত মানুষের হৃদয়ের জন্য স্বর্গীয় সান্ত্বনা। কুরআনের এই অমিয় বাণী মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার সাহস যোগায়, বিপদের মধ্যে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেয় আর ভবিষ্যতের প্রতি এক অদ্ভুত ভরসা তৈরি করে।
এই পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যার জীবনে দুঃখ আসেনি। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনেও ছিল অসংখ্য দুঃখ-কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা। তবুও তিনি কখনো হতাশ হননি। আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে তিনি এগিয়ে গেছেন, জাগিয়েছেন এক নতুন ভোরের আশ্বাস। কষ্ট মানেই শেষ নয় বরং কষ্ট একটি প্রস্তুতির সময়, এটি আমাদের পরিণত করে, পরিশুদ্ধ করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই আয়াতটি একবার নয়, দুইবার বলেছেন-
فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا - إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি। নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা ইনশিরাহ: আয়াত ৫-৬)
এখানে ‘আল-উসরি’ অর্থ দুঃখ, সংকট। আর ‘ইউসরা’ অর্থ স্বস্তি, প্রশান্তি। লক্ষণীয় বিষয় হলো- আল্লাহ কষ্টের আগে ‘আল’ নির্দিষ্ট করে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু স্বস্তির আগে করেননি। এর থেকে মুফাসসিররা ব্যাখ্যা করেছেন, একটি কষ্টের বিপরীতে একাধিক স্বস্তি আসবে। অর্থাৎ, কোনো বিপদ বা সংকট কখনোই চিরস্থায়ী নয় বরং তার পরে আসে প্রশান্তি, সুযোগ ও সাফল্য।
জীবনের কঠিন মুহূর্তে এই আয়াতটি যেন এক আশার প্রদীপ। কেউ যদি রাতের অন্ধকারে পথ হারায়, তাহলে একটি আলোই তার দিকনির্দেশনা হতে পারে। তেমনি যখন জীবন ঝড়ে ভেসে যায়, তখন এই আয়াত মানুষকে স্থিরতা দেয়, বলে- ‘এখন তুমি কষ্টে আছো, কিন্তু এটাও যাবে। সামনে অপেক্ষা করছে প্রশান্তির দিন।’
যারা আজ দুঃখ-দুর্দশায় আছেন, হয়তো চাকরি নেই, সংসার চলছে না, প্রিয়জন হারিয়েছেন অথবা কঠিন কোনো রোগে আক্রান্ত; তাদের উচিত এই আয়াতটি হৃদয়ে ধারণ করা। কারণ, আল্লাহ কখনো তার বান্দাকে অকারণে কষ্ট দেন না। প্রতিটি কষ্টের পেছনে রয়েছে শিক্ষা, পরীক্ষা এবং একটি বড় কল্যাণ।
জীবনে কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। কারণ, আল্লাহর কুরআন আমাদের শিখিয়েছে ‘নিশ্চয় কষ্টের পরে রয়েছে স্বস্তি।’ এই আয়াত আমাদের আশাবাদী হতে শেখায়, ধৈর্য ধরতে শেখায় এবং বিশ্বাস রাখতে শেখায় যে, প্রতিটি অন্ধকারের পরেই আসে একটি নতুন প্রভাত।
তাই আসুন, আমরা কষ্টের সময়েও আশার দীপ্ত আলো ধরে রাখি এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করে সামনের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাই। কেননা, যে আল্লাহ কষ্ট দেন, তিনিই স্বস্তি দেন। আর সেই স্বস্তিই একদিন হবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
লেখক: সভাপতি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি
