ক্ষতিপূরণের টাকা না দেয়ায় হাইকোর্টের অসন্তোষ: আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ মে ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গ্রিন লাইনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকার। ফাইল ছবি
আদালতের আদেশ সত্ত্বেও বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা পরিশোধ না করায় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আদালতের নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করে থাকলে তা হবে তাদের বড় ভুল। আমরা কঠোর হতে চাই না। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।
বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
গত বছর ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় প্রাইভেট কারচালক রাসেল সরকারকে। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
রাসেল সরকারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক এমপি উম্মে কুলসুমের করা এক রিট আবেদনে চিকিৎসা খরচ বাদেও ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগেও ওই আদেশ বহাল থাকে।
এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য এক মাস সময় নেয়। ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও আর কোনো অর্থ তারা পরিশোধ করেনি।
এ অবস্থায় গত ১৫ মে আদালত আরও সাত দিন সময় দিয়ে এর মধ্যে পুরো অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কড়া হুশিয়ারি দেন।
বুধবার বিষয়টি সামনে এলে আদালত প্রথমেই গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবী অজি উল্লাহর কাছে জানতে চান আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না।
অজি উল্লাহ তখন বলেন, গত ২০ তারিখ থেকে গ্রিনলাইন পরিবহন আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই আমি নিজেকে এ মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তাদের আচরণে খুবই অসন্তুষ্ট।
এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজাকে সামনে ডেকে আদালত জানতে চান, গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত রাসেলের চিকিৎসায় কী দিয়েছে।
আইনজীবী আদালতকে জানান, গ্রিনলাইন চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। এর আগে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে। ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা দেয়ার যে নির্দেশনা ছিল, সে ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করেনি।
আদালত এ সময় জানতে চান, রাসেল এখন হাঁটাচলা করতে পারেন কি না।
আইনজীবী রেজা বলেন, কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে, এখন ক্র্যাচে ভর করে হাঁটতে পারেন। আদালত কক্ষের পেছনের সারিতে বসা রাসেল তখন ক্র্যাচে ভর করে ডায়াসের কাছাকাছি আসেন।
এ পর্যায়ে রাসেলের আইনজীবী আদালতকে বলেন, আমার যা মনে হয় তারা (গ্রিন লাইন) অর্থ না দেয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে। গণমাধ্যমে সেরকমই খবর এসেছে।
তখন আদালত বলেন, যারা ব্যবসা করবে তাদের মানবীয় মূল্যবোধ থাকা উচিত। আমাদের সব উদ্বেগ সামগ্রিকভাবে আদেশে প্রতিফলিত হয় না। সবকিছু তো আর আদালতের আদেশ দিয়ে হয় না। আমরা শপথ নিয়েছি, আমাদের কারও প্রতি কোনো রাগ, অনুরাগ, বিরাগ নেই। কিন্তু আমাদের কাছে গ্রিনলাইনের আচরণ ভালো লাগেনি।
এরপর আইনজীবী অজি উল্লাহকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি তো এখনও আইনজীবী আছেন। যোগাযোগ করেন। নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।
পরে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন রেখে শুনানি স্থগিত করেন আদালত।
আদালতে গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ, রিট আবেদনকারীর পক্ষে খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীতে। ঢাকায় আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।