তোফাজ্জলের মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউ
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর
বরগুনায় জানাজায় হাজারো মানুষ * হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ-মানববন্ধন * বাবা-মা-ভাইয়ের কবরের পাশে সমাহিত

যুগান্তর প্রতিবেদন, বরগুনা ও বরগুনা দক্ষিণ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে গণপিটুনিতে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হত্যা মামলায় ঢাবির ৬ শিক্ষার্থী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায় জানাজা শেষে বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন মাসুদ কামাল তোফাজ্জল। শুক্রবার সকালে পাথরঘাটার তালুক গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। এমন নির্মম মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউ। জানাজা শেষে উপস্থিত জনতা নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন।
শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইনস্পেকটর আমিনুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করেন। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই ছয় শিক্ষার্থী হলেন-ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া (২৫), মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২১), পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ, ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ঢাবির এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাত পৌনে ৮টায় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগ করে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। তোফাজ্জল মানসিক রোগী, এটা বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান ছাত্ররা। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে অচেতন হয়ে পড়েন তোফাজ্জল। পরে তার মৃত্যু হয়।
জানাজায় হাজারো মানুষ : শুক্রবার সকালে পাথরঘাটার তালুক গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তোফাজ্জলের লাশ দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অংশ নেওয়া এলাকাবাসীর চোখে-মুখে শোকের পাশাপাশি ছিল ক্ষোভ আর ঘৃণার ছাপ। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের এমন পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় হতবাক তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, মা, বাবা, ভাই কেউ বেঁচে নেই। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারানো মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছে না কেউ। বাড়িতে নেই কান্নার রোল কিংবা আহাজারি। তবে শেষ বিদায়ে জানাজায় অংশ নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন হাজারো মানুষ। তাদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তোফাজ্জলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। ৮ বছর আগে বাবা, ৫ বছর আগে মা এবং এক বছর আগে একমাত্র ভাইকে হারান তোফাজ্জল। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে মানসিক অসুস্থতা নিয়ে তোফাজ্জল ছিলেন ভবঘুরে। অভিভাবকহীন থাকায় তোফাজ্জলের সুচিকিৎসাও হয়নি।
তোফাজ্জলের জানাজা শেষে উপস্থিত জনগণ নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে তারা সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার দ্রুততম সময়ে শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, তোফাজ্জল একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। সে বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তোফাজ্জলের চাহিদা ছিল ২০ থেকে ৫০ টাকা।
অথবা এক বেলা খাবার।
মুসল্লিরা বলেন, ছাত্রদের মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে এজন্য ঠান্ডা মাথায় একটি ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে হবে? কী নির্মম, নিষ্ঠুর ছাত্ররা! তোফাজ্জল তো তোমাদেরই কারও ভাই হতে পারত। কই তোফাজ্জলের সঙ্গে তো তোমরা মোবাইল ফোন পাওনি। ইমাম বলেন, তোফাজ্জলের বাবা, মা ও ভাইয়ের জানাজা আমি পড়িয়েছি। কোনো দিন বুঝতে পারিনি ওই পরিবারের শেষ জানাজা আমি পড়াব।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী হোন্ডাস্ট্যান্ডে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা। এ সময় বক্তারা আরও বলেন, তোফাজ্জল নিরপরাধী ছিল। তাকে এভাবে কেন হত্যা করা হলো? আমরা পাথরঘাটাবাসী এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মো. নাজমুল বলেন, তোফাজ্জল আমাদের এলাকার বড় ভাই। তাকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এটা কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারি না। তিনি কোনো সন্ত্রাসী বা অপরাধী ছিলেন না। তাহলে তাকে কেন এভাবে পিটিয়ে মারা হবে। আমরা এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে তোফাজ্জল ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে পুলিশে দিয়েছে। দুঃখ লাগে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। পুলিশে দিয়েছে। একজন ছাত্র হাসতে হাসতে বলে-‘আমার মোবাইল ফোনটা চুরি হয়েছে। আবেগে ওকে মারা হয়েছে।’
তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি কোনো চোর ছিলেন না। এমনকি এলাকায় তার নামে কারও কোনো অভিযোগ নেই। আমার ভাইয়ের হত্যায় জড়িতদের বিচার চাই।
বরগুনা জেলা শহরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : বরগুনা জেলা শহরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার তোফাজ্জল হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, তোফাজ্জল কোনো অপরাধ করেননি। তারপরও মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একবেলা খাবারের জন্য ঢাবির হলে গিয়েছেন তোফাজ্জল। সেখান থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের রিমান্ডে এনে তথ্য বের করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কতজন জড়িত ছিল। যারা জড়িত ছিল তাদের ঢাবি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মাসুদ কামাল তোফাজ্জল বরগুনার পাথরঘাটার সৈয়দ ফজলুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাকে দেখেছেন পাথরঘাটার অনেকে। কখনো উদোম শরীরে, আবার কখনো নোংরা পোশাকে তাকে দেখা যেত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। পরিচিত কেউ তাকে দেখলে খাবার কিনে দিতেন। আবার কারও কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েও তিনি খাবার কিনে খেতেন। ক্ষুব্ধ পাথরঘাটা ও বরগুনার বাসিন্দাদের দাবি, খুনি কখনো মেধাবী হতে পারে না। অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধীই। তাই তারা তোফাজ্জলকে নির্যাতনকারী সবার শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে তোফাজ্জল হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরগুনার শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন তারা।
পাথরঘাটার চারণ কবি ইদ্রিস আলী বলেন, মেধাবীরা কী করে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। অপরাধীরা যাতে পার না পেয়ে যায় সেজন্য তিনি রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানান। পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হোসাইন বলেন, তোফাজ্জল অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী একটি ছেলে ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। আমিসহ পাথরঘাটার অনেকেই তোফাজ্জলকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি, খাবার কিনে দিয়েছি, চিকিৎসারও উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষকে চাইলেই তো আর সুস্থ করে তোলা যায় না। আমরা তোফাজ্জলকে সুস্থ করে তুলতে পারিনি। আমরা তোফাজ্জলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তোফাজ্জলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী শরীফা আক্তার বলেন, তোফাজ্জলকে মারার আগে একজন আমার ফোনে কল দেয়। তোফাজ্জল কী হয় জানতে চায়। সে দেবর এ কথা বলার পরই তিনি বলেন, সে চুরি করে ধরা পড়েছে, তাকে বাঁচাতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর তারা ফোনে ধমক দিতে থাকেন এবং বলেন, কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না, তাহলে সমস্যা হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর বিভিন্ন লোকজনে ফোন দিয়ে জানান, তোফাজ্জল মারা গেছে। আমার স্বামীর বংশপরিচয় দেওয়ার মতো আর কিছুই রইল না। আমার দুই ছেলে, তারা বাবাহারা, তাদের একজন চাচা ছিল তাও শেষ করে দিল। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। যারা এ কাজ করেছে তাদের যেন বিচার করেন।
ঢাবিতে মানববন্ধন, হল প্রাধ্যক্ষের অপসারণ দাবি : তোফাজ্জল হত্যার প্রতিবাদে ঢাবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধন থেকে হত্যার ঘটনার বিচার দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য হলটির প্রাধ্যক্ষ ও প্রশাসনের অপসারণ দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধন হয়। নিহত তোফাজ্জলের গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। তার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ‘ঢাকাস্থ পাথরঘাটার শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসরীন সুলতানা বলেন, তোফাজ্জল শুধু পাথরঘাটার সন্তান নন, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক।
আমরা আর কোনো তোফাজ্জলকে হারাতে চাই না। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বলেন, তোফাজ্জলের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা কোনো প্রতিষ্ঠানে আমরা আর দেখতে চাই না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এ ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করছি।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এ দাবি করেন। ঢাবি আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক শিক্ষার্থী আইনজীবী ওবায়দুল তালুকদার। তিনি বলেন, চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে একজন মানুষকে হলের অতিথিকক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হলো অথচ হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কিছু জানলেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে। ব্যর্থতার জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসমা আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলাল হোসেন, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসিবুর রহমান, ইডেন মহিলা কলেজের মরিয়া তালুকদারসহ অনেকে। তারা বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে তোফাজ্জল হোসেনকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
হচ্ছে আরও একটি তদন্ত কমিটি : ফজলুল হক মুসলিম হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ৮ জন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। জড়িত বাকি শিক্ষার্থীদের বের করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত ৬ শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুজন হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ। শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের প্রাথমিকভাবে হল থেকে বহিষ্কার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের কথাও আমরা বলব। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় হলটির আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।