Logo
Logo
×

বাতায়ন

প্রয়োজন আরেকজন জিয়াউর রহমান

Icon

মেজর (অব.) মনজুর কাদের

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রয়োজন আরেকজন জিয়াউর রহমান

এক গ্রামে প্রভাবশালী এক ধনী মাতব্বর ছিলেন। তার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পেয়ে রাজধানী শহরে বাস করছিল। তার বাড়ির পাশে এক গরিব পরিবারের মেধাবী ছেলে স্কুলে ভর্তি হলে, মাতব্বরকে তার এক চেলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার খবর দেয়। মাতব্বর বলেন, ভর্তি হলে কী হবে, পাশ করতে পারবে না। পাশ করার খবর জানার পর মাতব্বর বলেন, পাশ করলে কী হবে, চাকরি পাবে না। চাকরি পাওয়ার কথা শোনার পর মাতব্বর বলেন, চাকরি পেলে কী হবে, বেতন পাবে না। বেতন পাওয়ার কথা শুনে মাতব্বর বলে ওঠেন, ওর চাকরি থাকবে না।

এ গল্পটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে বিপ্লব সংগঠিত হলে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম সরকারপ্রধান হিসাবে উঠে এলে অনেকেই বলতে থাকেন, তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে পারবেন না। প্যারিস থেকে ঢাকায় আসতে ৭২ ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ায় গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, তিনি এ অরাজকতার মধ্যে বাংলাদেশে আসছেন না।

ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে বিজয়ী ছাত্রনেতাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি যখন গণমাধ্যম এবং উপস্থিত সমাবেশের সামনে ছাত্রদের বিজয়গাথা বর্ণনা করতে থাকেন, তখন বলা হলো; ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লবের পর সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করার বিধান নেই। আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্সের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও বলা হলো এ সরকার অসাংবিধানিক, টিকবে না। ফ্যাসিস্টের রেখে যাওয়া প্রশাসন দিয়ে দেশ চালানো যাবে না বলে প্রচারণা চালানো হলো।

দেশ পুনর্গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা

সব বাধা ডিঙিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার পরপরই আনসার বাহিনী সচিবালয় ঘেরাওয়ের নামে তাণ্ডব চালালো, বলা হলো সরকার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, সংগ্রামী ছাত্ররা সেদিন জীবনবাজি রেখে আনসারদের নিবৃত্ত করে। এমনিভাবে একের পর এক আন্দোলন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় ছাত্রদের।

পুলিশবিহীন ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে গেলে ছাত্ররাই তা পুনরুদ্ধার করে। বিপ্লব-উত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠিত হয় ছাত্রদের সহযোগিতায়। ছাত্রদের ভূমিকার কারণে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয় এবং আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যখন সবকিছু শান্ত হতে থাকে, রাজনীতিবিদের ক্ষমতার নেশা আবার সবকিছুই নষ্ট করে দিতে থাকে। বলা হয় দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। এমনকি অনেকেই সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের মাটি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার পতনের উসকানি দিতে থাকে। সরকারের সংস্কারের কাজ ব্যাহত করার জন্য বলা হয় যে এ সরকারের পক্ষে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়।

‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফ্যাসিস্টদের কোনো স্থান নেই’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৩০ অক্টোবর ২০২৪-এ ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফ্যাসিস্টদের কোনো স্থান নেই’ শিরোনামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিতে, ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসাবে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের স্থান থাকা উচিত নয় বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দলটিতে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য থাকায় দেশের রাজনীতিতে এর কোনো স্থান নেই।

শেখ হাসিনা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ তুলেছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হয়তো ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তার সরকার এমন কিছু করবে না। কারণ, তারা রাজনৈতিক সরকার নয়’।

সামরিক শাসন বা জরুরি অবস্থা জারি না করেই এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলা

আধিপত্যবাদী শক্তির মদদপুষ্ট সরকার দীর্ঘ সময় নিয়ে দেশের সব রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে পালিয়ে গেছে। সামরিক শাসন, জরুরি অবস্থা বা অন্য কোনো জরুরি অধ্যাদেশ জারি না করে এ ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে গিয়ে ফ্যাসিস্টের রেখে যাওয়া প্রশাসন এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনবরত প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ড. ইউনূস সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করছেন।

সংস্কারে বাধা

এর মধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিবন্ধকতা আসার কারণে ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন। সবাই চমকে উঠেন। তবে দেশবাসী (সাইলেন্ট মেজরিটি) তার পক্ষে দাঁড়ায়।

এসময়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে ১ জুলাই ২০২৫-এ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ‘ঐক্য বজায় রাখার’ ডাক দেন। এভাবেই চাপ এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে চলেছেন ড. ইউনূস। অনেক সময় সম্পূর্ণ একা পথ চলতে হচ্ছে তাকে এবং এভাবেই তার সরকার এক বছর তিন মাস ধরে বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে টিকে আছে। এ পরিস্থিতিতেও ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন, সংস্কার, অপরাধীদের বিচার এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সংস্কার

সংস্কার খুব কঠিন বিষয়। অতীতে নির্বাচিত সরকার বাংলাদেশে কোনো সংস্কার করতে পারেনি, কারণ, রাজনৈতিক চাপের কারণে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, এ ভয়ে গোষ্ঠীস্বার্থের ওপরে রাজনীতিবিদরা উঠতে পারেন না।

তবে মানবকল্যাণবিরোধী কিছু সংস্কার ফ্যাসিস্ট হাসিনা করে গেছেন। ফলে ফ্যাসিবাদীরা প্রশাসন, অর্থনীতি এবং রাজনীতি সব ধ্বংস করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এগুলোকে পুনর্নির্মাণ না করা হলে রাষ্ট্র টিকবে না বলে ধারণা করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা।

সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না হলে যে ভবিষ্যতে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে, সে কথাটি বারবার বলা হচ্ছে।

মলাট বদলালে বই নতুন হয় না

মলাট বদলালে বই নতুন হয় না। পুরোনো পদ্ধতি রেখে নতুন মোড়ক লাগিয়ে কথাবার্তা বললে গত ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকা যাবে না। শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না, মাছ পচে গেলে তেমনি গন্ধ চাপা দেওয়া যায় না; পুরোনো পচা রাজনীতির গন্ধ ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সেই পুরোনো ঢংয়ের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পরের ব্যবসা-সম্পত্তি আত্মসাৎ, হত্যা, খুন, রাহাজানি, দস্যুবৃত্তি সবই চলছে, রাজনীতিবিদরা এ পারপ্রেটরদের প্রকাশ্যে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।

২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এগুলোকে থামাতে পারেনি। পুরোনো পদ্ধতির রাজনীতি এবং পুরোনো ঢংয়ের নির্বাচিত সরকার নতুন মলাট নিয়ে আবির্ভূত হয়ে এসব অপকর্ম থামাতে পারবে, তার গ্যারান্টি কোথায়? এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ একটি মাফিয়া স্টেটে রূপান্তরিত হতে বেশি সময় লাগবে না।

ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে

ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরশাসক ঠেকাতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। এ কাজে আপস করার অর্থ হলো আত্মহনন করা। ২২৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এর কারণ হলো জাতি গঠনের জন্য ৫ জন জ্ঞানী ব্যক্তি একত্রে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তৈরি করেছিলেন। তারা জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করেছিলেন, শক্তিমানদের নয়। সে মোতাবেক, বর্তমান ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারপারসন হলেন, মাইকেল হোয়াটল, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যিনি সিনেটে প্রেসিডেন্ট হিসাবে থাকেন, সমান সমান ভোট হলে তার কাস্টিং ভোট প্রদান করেন। সিনেটে মেজরিটি লিডার হলেন জন থুন, হাউস স্পিকার মাইক জনসন, হাউস মেজরিটি লিডার স্টিভ স্ক্যালিস। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স’ সিস্টেম রয়েছে, সে কারণে দেশটিতে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিস্টের উত্থান হয় না। এখানে এক ব্যক্তির কাছে সব ক্ষমতা নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশের সংবিধান এক ব্যক্তির কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অধিকার দিয়েছে, যার কারণে অতীতে স্বৈরাচারের উত্থান হয়েছে। এ অবস্থার সমাপ্তি ঘটাতে হবে।

আধিপত্যবাদী শক্তির গোয়েন্দা রয়েছে সর্বত্র

রাষ্ট্রের ৩টি স্তম্ভ-আইন, বিচার, প্রশাসনিক বিভাগ এবং ৪র্থ এস্টেট গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে বসে আছে। রাষ্ট্রপুনর্গঠন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিচরণ বন্ধ করতে না পারলে তাদের মদদপুষ্টরাই নির্বাচনের মাধ্যমে খোলস বদলিয়ে আবার ক্ষমতায় আসবে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বাসিত করবে।

দেশপ্রেমিক জনগণকে এজন্য সজাগ থাকতে হবে এবং আধিপত্যবাদী শক্তির মদদপুষ্টদের পরাভূত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করতে হবে, যাতে গ্রামের বেকার যুবকের চাকরিতে যোগদানের পর বেতন পাওয়ার কথা শুনে মাতব্বর কখনো বলে উঠতে না পারেন, ‘ওর চাকরি থাকবে না’ বা ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলে কী হবে, জনগণ তা রক্ষা করতে পারবে না’।

দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে সংস্কারের অগ্রগতি করতে হবে :

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের নামে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার দায়-দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে বলে ৩১ আগস্ট ২০২৫-এ মন্তব্য করেন সরকারের একজন উপদেষ্টা। এ হামলাকে একটি সুগভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন সংবিধানের ৬৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। ফ্যাসিস্টের রেখে যাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায়, দেশে চলছে দ্বৈত শাসন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছিল রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা এবং বাংলার নবাব সিরাজউদদৌলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। ফলাফল কী হয়েছিল, তা সবার জানা আছে। তাই সরকারকে আটঘাট বেঁধে নামতে হবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ (International Crimes Tribunal Act, 1973) অনুযায়ী। এ আইনের ৩(১) ধারায় বলা আছে-

‘যে কোনো ব্যক্তি, সে বেসামরিক হোক বা সামরিক, যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা বা শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত করে, তবে সে এই আইনের অধীনে বিচারযোগ্য’। অর্থাৎ, ‘যে কোনো ব্যক্তি’ এ কথাটির মধ্যে বাংলাদেশের সব নাগরিক অন্তর্ভুক্ত। যদি প্রমাণিত হয় যে কোনো পর্যায়ের ব্যক্তি যুদ্ধকালীন বা অযুদ্ধকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী কাজ (যেমন-হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, নির্যাতন, গণহত্যা, নির্বাসন ইত্যাদি) করেছেন, তাহলে তিনি বিচারাধীন হতে পারেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা এ আইনের অপব্যবহার করেছিলেন।

বুমেরাং

এ কারণে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আসামি হিসাবে ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, তিনি প্রার্থনা করবেন যাতে আওয়ামী লীগ এ আইনটি রাখে, যাতে তাদের এসব অপকর্ম, অবৈধ বিচারকার্য এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার এ আদালতে হতে পারে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, একই আদালতে এবং একই আইনে ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিস্টের দোসরদের বিচার হচ্ছে। ড. ইউনূস এ বিচার যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার অঙ্গীকার করেছেন।

আধিপত্যবাদকে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা

বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসন অর্থাৎ অবিভক্ত ভারত (The Great Indian Invention Plan) বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে একজন মাত্র নেতা অবস্থান নিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে বহু দেশপ্রেমিক বরেণ্য ব্যক্তি একই ছাতার নিচে সমবেত হয়েছিলেন। জিয়ার সুরে যারা কথা বলবেন, তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো জটিল পরিস্থিতিসহ অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে এবং তা করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের মতো শাহাদত বরণ করতে হতে পারে। যারা ভীতু, তাদের জিয়াউর রহমানকে অনুসরণ না করাই শ্রেয়।

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ ড. ইউনূসের মধ্যে জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখছি’।

সমীকরণ বদলে যাবে

সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাজনীতির অনেক সমীকরণ বদলে যাবে। সংসদ নির্বাচনে মার্কার পেছনের ব্যক্তির সততা, সক্ষমতা এবং মানবতার বিষয়টি এবার আগে দেখবেন ভোটাররা। হুজুগে বাঙালি বলে পরিচিত জনগোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে প্রার্থীদের সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছেন, যা ২০০৮ সালের নির্বাচনেও ছিল না। এখন মিথ্যা আশ্বাস এবং দেশবিরোধী রাজনীতিতে বিশ্বাস করছেন না কেউ।

নীরবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। গত সোয়া বছরে অন্তর্বর্তী সরকার শুধু টিকেই থাকেনি, গ্রামের মাতব্বরের কথা উড়িয়ে দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাও দিয়েছে এবং সঙ্গে দিয়েছে আরও অনেক কিছু। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি করেছে, নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করছে।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচিত সরকারপ্রধানের মধ্যে জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠুক, এ প্রত্যাশা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ।

মেজর (অব.) মনজুর কাদের : সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম