Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে পদমদীর ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র’

Icon

হেলাল মাহমুদ, রাজবাড়ী

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে পদমদীর ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র’

ছবি: সংগৃহীত

কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’র রচয়িতা সাহিত্যসম্রাট মীর মশাররফ হোসেন। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। তার স্মৃতি রক্ষায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদী গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র’। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, লোকবল ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটির অবস্থা এখন বেহাল। ভবনে ফাটল, পলেস্তারা খসে পড়া, সংগ্রহের দৈন্যদশা-সব মিলিয়ে সাহিত্যপ্রেমীদের এই তীর্থস্থান এখন অযত্ন-অবহেলার প্রতিচ্ছবি। কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় দিনদিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে কেন্দ্রটি, যা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা।

জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বালিয়াকান্দির পদমদী গ্রামে। তার লেখাপড়ার শুরু কুষ্টিয়ায়। পরে পদমদী গ্রামের বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া করেন। তার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে কৃষ্ণনগর ও কলকাতায়। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার স্টেটেও নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর কালজয়ী এই সাহিত্যিক ইন্তেকাল করেন। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি কুলসুমের পাশে সমাহিত করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মীরের কবরটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘কথামালা’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন প্রচারের পর টনক নড়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মিত হয় বর্তমান স্মৃতিকেন্দ্রটি। ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে ৮৪ শতাংশ জমির ওপর ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে স্মৃতিকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। এখানে আছে সংগ্রহশালা, ১০০ আসনবিশিষ্ট সেমিনার কক্ষ, দপ্তর, গ্রন্থাগার, অতিথি কক্ষ, ডাইনিং, কিচেন ও প্রসাধন কক্ষ। তবে অনেক কক্ষই এখন জরাজীর্ণ।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, স্মৃতিকেন্দ্রের প্রবেশপথে বসার বেঞ্চগুলো ভাঙা। এছাড়া ভবনের কক্ষগুলোয় আলো নেই, লাইট নেই। কোনো দর্শনার্থীও চোখে পড়েনি। দুইজন কর্মচারী বারান্দায় বসে আছেন। ভবনের বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। অনেক স্থানে রং উঠে গেছে। মূল প্রবেশপথের দুই পাশে থাকা লাইটগুলোও খোয়া গেছে। ভেতরে বুক শেলফে মীর মশাররফ হোসেনের লেখাসহ কয়েকশ বই।

স্থানীয়রা জানান, পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য এখানে বসার কোনো স্থান নেই, বেঞ্চগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকলেও শুক্র, শনিবারসহ সব সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে। অথচ ছুটির দিনগুলোতেই এখানে বেশি মানুষ আসেন।

স্মৃতিকেন্দ্রের সভাপতি কবি সালাম তাসির বলেন, বাংলা একাডেমি স্মৃতিকেন্দ্রের উন্নয়নে কখনো সেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্মৃতিকেন্দ্র থেকে সাহিত্যের আলো ছড়াতে সংস্থাটির আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

রাজবাড়ীর কবি নেহাল আহম্মেদ বলেন, আমি কয়েকবার স্মৃতিকেন্দ্রে গিয়েছি। কবি-সাহিত্যিকরা যে লেখালেখি করবেন অথবা সময় কাটাবেন, তেমন পরিবেশ সেখানে পাইনি। স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। সংগ্রহশালায় তেমন কিছু নেই, ইন্টারনেট সংযোগ নেই, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

দেবাশীষ বিশ্বাস নামে এক দর্শনার্থী বলেন, স্মৃতিকেন্দ্রটিতে জনবলের যথেষ্ট অভাব। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে পর্যটনকেন্দ্র ও একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা শোনা গেলেও সেটা আজও হয়নি।

আরেক দর্শনার্থী রোমান রহমান বলেন, অনেক অর্থ ব্যয়ে স্মৃতিকেন্দ্রটি তৈরি হলেও এটি এখন নষ্ট হতে চলেছে। সরকারের কত টাকা কতদিকে যায়; কিন্তু এরকম সুন্দর একটি স্মৃতিকেন্দ্রের সংস্কার করা হচ্ছে না-এটি খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, এটি বাংলা একাডেমির অধীনে রয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে এখানে দর্শনার্থী ও পাঠকদের জন্য বসার বেঞ্চ মেরামত, দেওয়ালে রং করা, ইন্টারনেট সংযোগ প্রভৃতি কাজ করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম