পঞ্চগড়ের লোকালয়ে মহাবিপন্ন বনরুই উদ্ধার
ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঠাকুরগাঁওয়ের পর এবার পঞ্চগড়ের লোকালয়ে মহাবিপন্ন প্রাণী বনরুইয়ের দেখা মিলেছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে জেলার বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে আহত অবস্থায় বিরল প্রজাতির একটি কালো রঙের বনরুই উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে সীমান্ত উপজেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকেও একটি ধূসর রঙের বনরুই উদ্ধার করা হয়েছিল।
উদ্ধার হওয়া আহত প্রাণীটিকে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা বন অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেটিকে পরিচর্যার জন্য সিলেটের মৌলভীবাজারের এক কেন্দ্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পার্শ্ববর্তী পুরোনো গোরস্তানের দিক থেকে কালো রঙের অচেনা একটি প্রাণী আসতে দেখে উপস্থিত লোকজন প্রথমে ভয় পান। রাতের অন্ধকারে মাঠে ছুটে বেড়ানো প্রাণীটিকে দেখে কৌতূহলী স্থানীয় কয়েকজন লাঠি দিয়ে এটিকে বেদম পিটুনি দেন। মারা গেছে ভেবে একপর্যায়ে তারা প্রাণীটিকে মাঠেই ফেলে রাখেন।
কালিয়াগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান দ্রুত গিয়ে মারধর করতে নিষেধ করেন এবং ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সহিদুল ইসলামকে খবর দেন। গুগলে সার্চ দিয়ে তারা নিশ্চিত হন যে এটি একটি বনরুই।
খবর পেয়ে সহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি প্রাণীটিকে বনরুই হিসেবে শনাক্ত করেন এবং আহত, রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তার নিবিড় পরিচর্যায় বর্তমানে বনরুইটি সুস্থ আছে বলে জানা গেছে। উদ্ধার হওয়া কালো রঙের বনরুইটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই ফুট এবং ওজন ৬ কেজি।
উদ্ধার হওয়া মহাবিপন্ন এই প্রাণীটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বন অধিদপ্তর কার্যক্রম শুরু করেছে।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে উদ্ধার হওয়া বনরুইটি সিলেটের মৌলভীবাজারে পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির এই নিরীহ বন্যপ্রাণীটি সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখে সুস্থ করে তোলা হবে। সুস্থ হলেই প্রাণীটিকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে।
তিনি জানান, এর আগে ২০২০ সালে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে ৩টি, ২০২৪ সালে নেত্রকোনা ও পটুয়াখালী থেকে একটি করে এবং ঢাকা থেকে একটি বনরুই উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ২০২৫ সালে সুনামগঞ্জ থেকে একটি বনরুই উদ্ধার করা হয়েছে।
দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফাহিম মাসউদ জানান, আহত বনরুইটিকে বন বিভাগের মাধ্যমে ঢাকায় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল এর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতেও একটি বনরুই উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেছেন।
ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সহিদুল ইসলাম বলেন, আইইউসিএন (IUCN) কর্তৃক মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষিত এই বনরুই সাধারণত গোরস্থান ও বাঁশঝাড়ের মাটির গর্তে বসবাস করে। গভীর রাতে এরা চলাচল করে এবং পিঁপড়া ও উইপোকার ডিম খেতে পছন্দ করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পঞ্চগড়ের লোকালয়ে বনরুই ধরা পড়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
