স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো মন্ত্রী নেই বৃহত্তর পাবনায়

 আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা প্রতিনিধি 
০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:২৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

পদ্মা-যমুনা বিধৌত নানা ঐতিহ্যমণ্ডিত ১৯০ বছরের পুরনো জেলা পাবনা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সংগঠিত সব আন্দোলন-সংগ্রামে এ জেলাবাসীর রয়েছে সক্রিয় ভূমিকা।

একসময়ের উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত এ জেলা এখন দেশের অন্যতম শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, ঈশ্বরদী ইপিজেড, রেলওয়ের বিভাগসহ ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকায় এ জেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

এখানে পদচারণা হয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিত্তরঞ্জন দাস, নেতাজী সুবাস বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক মহিয়সীর। এছাড়া এখানকার রাজনৈতিক ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

অনেক বড় এ জেলাকে ব্রিটিশ আমলে পদ্মা ও যমুনার সীমা ধরে জেলার সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ইতিহাসের এসব গুরুত্বের কারণেই স্বাধীনতার পরে সব সরকারের আমলেই বৃহত্তর পাবনা (পাবনা ও সিরাজগঞ্জ) জেলা একাধিক মন্ত্রী পেয়েছে। কিন্ত এবারই বৃহত্তর পাবনায় কোনো মন্ত্রী নেই।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে গঠিত সরকারে বৃহত্তর পাবনা থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচ ক্যাপ্টেন মনসুর আহমদকে যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন।

১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সরকারে পাবনার বেড়া উপজেলার মির্জা আবদুল হালিম নৌপরিবহনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। সে সময় সিরাগঞ্জ মহকুমা থেকে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পান ডা. অধ্যাপক এম এ মতিন।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর এরশাদের আমলে সিরাগঞ্জ থেকে অধ্যাপক এম এ মতিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পাবনার বেড়ার সন্তান (এরশাদের আমলেই পাবনা ও সিরাজগঞ্জ আলাদা জেলা হয়) এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার পরিকল্পনামন্ত্রী এবং মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সময় পাবনার বেড়ার সন্তান ওসমান গণি খান সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্র এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং বেড়ার সন্তান অধ্যাপক আবু সাইয়িদ হন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

২০০১ সালের বিএনপি জোটে সরকারের সময়ে সাঁথিয়া থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ে দণ্ডিত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শিল্পমন্ত্রী এবং সিরাগঞ্জ থেকে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।

এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বেড়ার সন্তান অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, একে খন্দকার পরিকল্পনামন্ত্রী এবং মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মির্জা আবদুল জলিল প্রাইভেটাইজেশান বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। সিরাজগঞ্জ থেকে আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বৃহত্তর পাবনার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ঈশ্বরদী থেকে শামসুর রহমান শরিফ ডিলু ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর পাবনাতে আওয়ামী লীগ ৫টি আসনে জয়ী হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম, শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, শামসুল হক টুকু, মকবুল হোসেন এবং গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স বিজয়ে হ্যাটট্রিক করেন।

এবারে গুঞ্জন ছিল বৃহত্তর পাবনা থেকে একাধিক মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন। কিন্ত বৃহত্তর পাবনা (পাবনা ও সিরাজগঞ্জ) থেকে কেউই মন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি।

স্বাধীনতার পর এবারেই প্রথম পাবনা মন্ত্রীশূন্য হলো। তবে এখনো এ জেলার মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে।

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, ১৯০ বছরের পুরনো পাবনা জেলা। এখানে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানকার সমৃদ্ধ রাজনীতি এবং জেলার গুরুত্ব অনুধাবন করে এখানে একজন পূর্ণ মন্ত্রী থাকাটা বাঞ্ছনীয়।

পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, পাবনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে একাধিক মন্ত্রী অতীতে ছিল। বিষয়টি নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুকন্যা অনুধাবন করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা করেছেন তাকে স্বাগত জানাই। দল করলে তার সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে। নেত্রী হয়তো তার সুবিধামতো একদিন পাবনাবাসীর আশাও পূরণ করবেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন