মূল্যস্ফীতির ফলে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের জনজীবন

 যুগান্তর ডেস্ক 
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৭ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এমন সময়ে বাড়ছে যখন দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে তার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। 

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুর্বলতায় হঠাৎ সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষ। সবকিছু মিলে কঠিন চাপে আছেন ভোক্তরা।

রাজনৈতিক অরাজকতা ও অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার ফলে জন্মলগ্ন থেকেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে আসছে পাকিস্তান। পরবর্তীতে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও সর্বশেষ ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ফলে দেশটির অর্থনীতি এখন তীব্র সংকটের মুখে৷ 

ডলারের পর্যাপ্ত রিজার্ভ না থাকার কারণে দিন দিন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে মানুষ এখন নিজেদের জমানো অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। যাদের সঞ্চয়কৃত অর্থ নেই তারা পড়ছেন ঋণের ফাঁদে । 

পাকিস্তানের জনগণ কিভাবে এখন তাদের প্রয়োজনীয় ব্যায় মেটাচ্ছে এ নিয়ে দেশটির জনপ্রিয় গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

পাঞ্জাব প্রদেশের টাক্সিলা বিলাল কলোনিতে বসবাসরত বিধবা জুবাইদা বিবি ডনকে জানান, আগষ্ট মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য তিন দশক আগের বিয়ের আংটি বন্ধক রাখতে হয়েছে তার। তিনি আশা করছেন পেনশনের টাকা পেলে সেই বন্ধক রাখা আংটি হয়তো ফিরিয়ে আনতে পারবেন। 

করাচির আহমাদ জামান যিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার মতে, মাসে দেড় লাখ বেতনও এখন পরিবারের ব্যয় মেটানোর জন্য অপর্যাপ্ত মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেই ৭৫ হাজার রুপি ব্যয় করতে হচ্ছে। যা তার উপার্জনের অর্ধেক।

বড় বড় পরিবার যাদের একাধিক উপার্জনকারী রয়েছেন তারাও এখন সুখে নেই। তেমনই একজন হুসাইন সাব্বির। যার সাতজনের একটি পরিবারের তিনজনই উপার্জন করেন। 

তিনি জানান, তিনজনের মাসিক এক লাখ ত্রিশ হাজার রুপি উপার্জন থাকার পরও ঋণ পরিশোধের জন্য বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাহ্যত পাকিস্তানের জনজীবন এখন বিপর্যস্ত৷ সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেকেই তাদের জীবন পরিচালনায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে গরিবদের জন্য জ্বালানি খাতে ভর্তুকি ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু দেশটিতে রাজস্ব ও জ্বালানির যে ঘাটতি, তাতে করে সেটা বাস্তবায়ন অনেকটাই জটিল। 

ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল, আর মার্চ মাসে তা আরও বেড়ে ৩৫ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়। ১৯৭৪ সালের পর এই মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন