‘সেখানে পৌঁছে আমি নির্বিকার ছিলাম’

 সাউদিয়া ইসলাম জেরীন 
২৬ মে ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

আনটারমায়ার গার্ডেন কনজারভেন্সিতে যাওয়ার পরিকল্পনা হঠাৎ করেই। সেদিন সকালটা ছিল খুব সুন্দর। ঘুম থেকে উঠে অল্প কিছু খেয়েই চলে গেলাম স্টারবাক্সে। একটা কফি নিয়ে শুরু হলো আমাদের যাত্রা। বাসা থেকে ১ ঘণ্টা দূরে আনটারমায়ার গার্ডেনে যেতে খুব বেশি ঝামেলা হয়নি। উইকেনড থাকাতে যানজট কম ছিল। ফলে দ্রুতই চলে গেলাম সেখানে।

সেখানে পৌঁছে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। এটা এত সুন্দর ছিল যে আমি নির্বিকার ছিলাম। আবহাওয়া উষ্ণ ছিল। এটি ছিল প্রায় ৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আমরা অনেক ফুল দেখেছি। শুধু তাই নয়, হাডসন নদী সূর্যের আলো প্রতিফলিত করছিল। হাডসন নদীর জলের রঙ ছিল রূপালী। তাই এটি ক্যারিশম্যাটিক লাগছিল, আমরা কিছুক্ষণ নদীর ধারে বসেছিলাম। দেখলাম অনেক শিক্ষার্থী তাদের সমাবর্তনের ফটোশুটের জন্য এসেছে।

১৮৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম টুপি কারখানার মালিক জন টি ওয়ারিং ‘বোলমার এস্টেট’ থেকে ৩৩ একর জমি কিনেছিলেন। পরে স্থপতি জন ডেভিস হ্যাচকে দিয়ে এটির ওপর একটি বুরুজ অট্টালিকা তৈরি করেছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন ‘গ্রেস্টোন’। ১৮৭৬ সালে ওয়ারিং কিছু আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে বোস্টনে চলে যান। আর ৯৯ রুমের প্রাসাদটি ভাড়ার জন্য রেখে দেন। 

১৮৭৯ সালে ওয়ারিংয়ের কাছ থেকে প্রাসাদটি ভাড়া নেন নিউইয়র্ক রাজ্যের একজন সাবেক গভর্নর এবং রাজনীতিবিদ স্যামুয়েল জে. টিল্ডেন। এরপর তিনি এটি কিনে নেন। রাজনীতিবিদ টিল্ডেন উদ্যান পালনে আগ্রহী ছিলেন এবং শোভাময় গাছের পাশাপাশি ফল ও শাকসবজি লাগিয়ে ১৩টি গ্রিনহাউস তৈরি করেছিলেন। ১৮৮৬ সালের ৪ আগস্ট গ্রেস্টোন মারা যান। এরপর ১৮৯৯ সালে টিল্ডেনের এস্টেটগুলো নিলামে কিনে নেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আইনজীবী স্যামুয়েল আনটারমায়ার। তারপর তিনি নিজের নামে আনটারমায়ার পার্ক এবং গার্ডেন নির্মাণ করেন।  

ফুলের বাগানে ঘেরা যে ট্রেইল মুগ্ধতা ছড়ায়

স্যামুয়েল আনটারমায়ার বাগান এবং গ্রিনহাউসগুলোকে আমেরিকার বিখ্যাত বাগানে রূপান্তরিত করেছিলেন। স্যামুয়েল আনটারমায়ারের মালিকানাধীন আন্টারমায়ার গার্ডেন কনজারভেন্সি নামে একটি অলাভজনক সংস্থার মাধ্যমে বাগানটি দেখভাল হয়ে থাকে। আনটারমায়ার পার্ক এবং গার্ডেনটি নিউইয়র্ক সিটির ঠিক উত্তরে ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টির নিউইয়র্কের ইয়ঙ্কার্সে অবস্থিত। মূল এস্টেটের উত্তর এবং পূর্বে আরও জমি ক্রয়ের মাধ্যমে এস্টেট প্রসারিত করার পর তিনি ১৯১৬ সালে বাগানের নকশা করার জন্য বিউক্স আর্টস স্থপতি ওয়েলেস বসওয়ার্থকে নিয়োগ করেন। এ বাগানগুলো হাডসন নদীর চেয়ে ১৫০ একরেরও বেশি বিস্তৃত এবং ৬০ জন উদ্যানপালক দিয়ে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এটি ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং বিশেষ ইভেন্টের জন্য, যার মধ্যে গ্রেস্টোনের বিখ্যাত চন্দ্রমল্লিকা ও টিউলিপগুলোর প্রদর্শনী ছিল। ১৯৩৯ সালে একদিনে ত্রিশ হাজার মানুষ এটি পরিদর্শন করেছিল।

উদ্যানপালনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের ইনপুট ও হেড গার্ডেনার টিমোথি টিলঘম্যানের নেতৃত্বে নিবিড় তত্ত্বাবধান আর কঠোর পরিশ্রমে বাগানের শোভা আরও বেড়েছে। তার নান্দনিক নকশায় বাগানপ্রেমী জনসাধারণকে মুগ্ধ করছে। বাগানটি সত্যি অসাধারণ।

লেখক: ট্রাভেল ব্লগার ও সমাজকর্মী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন