jugantor
সেই অস্ত্রধারী ক্যাডার তুহিন এবার রাবি ছাত্রলীগের সম্পাদক

  রাজশাহী ব্যুরো  

২২ জুলাই ২০১৩, ০০:০০:০০  | 

সেই অস্ত্রধারী ক্যাডার তৌহিদ-আল-তুহিন এবার হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। অস্ত্রবাজি, আধিপত্য বিস্তার আর নানা অপকর্মের ‘পুরস্কার’ই দেয়া হয়েছে নিজ দলের কর্মী হত্যা মামলার এ আসামিকে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তুহিনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। বিতর্কিত সে ক্যাডারকেই রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাবি ছাত্রলীগের ২৪তম কাউন্সিল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ও দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল এতে উপস্থিত ছিলেন। দিনভর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান বজলু ও খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন। নতুন কমিটিতে সভাপতির পদ পান বর্তমান কমিটির উপ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা। রানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার বাসিন্দা। আর সাধারণ সম্পাদক তুহিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এমবিএর শিক্ষার্থী।

তৌহিদ আল তুহিনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলা। ডাকাতি মামলায় জেলেও ছিলেন তিনি। এছাড়াও নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন কাউকে সাধারণ সম্পাদক করেও যেন গর্বিত ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের হাই কমান্ডের মতে, ক্যাম্পাসে শিবিরবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাকেই প্রয়োজন! গত বছরের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একপক্ষের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন। ওই বন্দুকযুদ্ধে প্রতিপক্ষের কর্মী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় তুহিনকে। কিন্তু তুহিন তো গ্রেফতার হনই-নি বরং দলের নাম ভাঙিয়ে পুলিশের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় বসে ওসির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার সময় ধরা পড়েন সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। এরপর ক্যাম্পাসে তুহিনের দাপট আরও বেড়ে যায়। আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। অভিযোগ আছে, কারণে-অকারণে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রায়ই মারধর করতেন। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও ঘুরতেন। এরপর ২ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাত-আট অস্ত্রধারীকে নিয়ে তুহিন ঝাঁপিয়ে পড়েন শিবিরের ওপর। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করতে থাকেন তিনি। সে সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সেই ফুটেজ প্রচার করা হয়। এতে দেখা যায় সিনেম্যাটিক স্টাইলে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালাচ্ছেন তিনি। আর এ সময় পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। ঘটনার পরদিন সব জাতীয় পত্রিকায় অস্ত্রসহ ছবি ছাপা হয় তুহিনের। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘটনা টেলিভিশনে দেখে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি আবদুস সোবহানকে ফোনে নির্দেশ দেন তুহিনসহ সব অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু এ পর্যন্ত তুহিন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি তুহিনসহ অন্যদের বহিষ্কার করে। তবে কিছুদিন পরে আলোচনা-সমালোচনা থেমে গেলে সেই বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় ছাত্রলীগের হাইকমান্ড। আর এবার সেই অস্ত্রবাজির পুরস্কারস্বরূপ তুহিনকে দেয়া হল ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। কমিটি ঘোষণার পরপরই উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানান ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তি মোকাবেলার করার জন্য আমরা তুহিনকে যোগ্য মনে করেছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তুহিনকে প্রয়োজন বলেও দাবি করেন রাসেল। তবে তুহিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন।


 

সাবমিট

সেই অস্ত্রধারী ক্যাডার তুহিন এবার রাবি ছাত্রলীগের সম্পাদক

 রাজশাহী ব্যুরো 
২২ জুলাই ২০১৩, ১২:০০ এএম  | 

সেই অস্ত্রধারী ক্যাডার তৌহিদ-আল-তুহিন এবার হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। অস্ত্রবাজি, আধিপত্য বিস্তার আর নানা অপকর্মের ‘পুরস্কার’ই দেয়া হয়েছে নিজ দলের কর্মী হত্যা মামলার এ আসামিকে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তুহিনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। বিতর্কিত সে ক্যাডারকেই রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাবি ছাত্রলীগের ২৪তম কাউন্সিল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ও দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল এতে উপস্থিত ছিলেন। দিনভর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান বজলু ও খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন। নতুন কমিটিতে সভাপতির পদ পান বর্তমান কমিটির উপ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা। রানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার বাসিন্দা। আর সাধারণ সম্পাদক তুহিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এমবিএর শিক্ষার্থী।

তৌহিদ আল তুহিনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলা। ডাকাতি মামলায় জেলেও ছিলেন তিনি। এছাড়াও নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন কাউকে সাধারণ সম্পাদক করেও যেন গর্বিত ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের হাই কমান্ডের মতে, ক্যাম্পাসে শিবিরবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাকেই প্রয়োজন! গত বছরের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একপক্ষের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন। ওই বন্দুকযুদ্ধে প্রতিপক্ষের কর্মী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় তুহিনকে। কিন্তু তুহিন তো গ্রেফতার হনই-নি বরং দলের নাম ভাঙিয়ে পুলিশের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় বসে ওসির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার সময় ধরা পড়েন সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। এরপর ক্যাম্পাসে তুহিনের দাপট আরও বেড়ে যায়। আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। অভিযোগ আছে, কারণে-অকারণে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রায়ই মারধর করতেন। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও ঘুরতেন। এরপর ২ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাত-আট অস্ত্রধারীকে নিয়ে তুহিন ঝাঁপিয়ে পড়েন শিবিরের ওপর। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করতে থাকেন তিনি। সে সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সেই ফুটেজ প্রচার করা হয়। এতে দেখা যায় সিনেম্যাটিক স্টাইলে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালাচ্ছেন তিনি। আর এ সময় পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। ঘটনার পরদিন সব জাতীয় পত্রিকায় অস্ত্রসহ ছবি ছাপা হয় তুহিনের। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘটনা টেলিভিশনে দেখে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি আবদুস সোবহানকে ফোনে নির্দেশ দেন তুহিনসহ সব অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু এ পর্যন্ত তুহিন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি তুহিনসহ অন্যদের বহিষ্কার করে। তবে কিছুদিন পরে আলোচনা-সমালোচনা থেমে গেলে সেই বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় ছাত্রলীগের হাইকমান্ড। আর এবার সেই অস্ত্রবাজির পুরস্কারস্বরূপ তুহিনকে দেয়া হল ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। কমিটি ঘোষণার পরপরই উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানান ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তি মোকাবেলার করার জন্য আমরা তুহিনকে যোগ্য মনে করেছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তুহিনকে প্রয়োজন বলেও দাবি করেন রাসেল। তবে তুহিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র