jugantor
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
অস্ত্রবাজি ছিনতাই চাঁদাবাজি সব কিছুতেই ওরা

  যুগান্তর ডেস্ক  

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

বুলবুল চৌধুরী/জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের আধিপত্য চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে সংগঠনটির কিছু চিহ্নিত নেতাকর্মী। অথচ তারা কখনও আটক বা গ্রেফতার হয় না। এ ছাত্র সংগঠনটির কিছু নেতার নৈতিক অধঃপতনের সুযোগে শিবিরকর্মীরা এদের ব্যবহার করছে এমন অভিযোগও উঠেছে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জামায়াত-শিবিরের মদদে ও গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছে। রোববার ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগঠিত সংঘর্ষ ও প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে সবচেয়ে বেশি দেশী ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র। এ সংঘর্ষে দশেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর প্রায় সবগুলোই ব্যবহার করেছে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই সংঘর্ষের ছবিগুলোতে এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ সংঘর্ষের দু’দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার হয়নি একটিও আগ্নেয়াস্ত্র বা গ্রেফতার হয়নি কোনো অস্ত্রধারী। ৮০-এর দশকে সর্বপ্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়। তবে তা ছিল দেশীয় পাইপ গান, পিস্তল ও শুটার গান। পরবর্তীতে দু’একটি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রও সে সময় ব্যবহৃত হলেও এত ব্যাপকসংখ্যক নয়, রোববারের ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংগঠিত সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসার পর গত ৬ বছর থেকে ক্যাম্পাসে বেড়েছে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নিয়োগ-বাণিজ্য ও হলের সিট দখল, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, অস্ত্রবাজি, পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ ছাত্রদের মারধরসহ নানা ধরনের অপরাধসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড। পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহতার দিকে গেছে যে তাতে বন্ধ করতে হয় রোববার বিশ্ববিদ্যালয়টি।

রোববারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্র ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, রোববারের সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর হাতে পিস্তল দেখা গেছে। এই গ্র“পটির উসকানিতেই ছাত্রলীগ বারবার অস্ত্রবাজিতে জড়াচ্ছে। ছাত্রলীগকে যেন কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না। একশ্রেণীর নেতার বেপরোয়া অস্ত্রবাজিতে অশান্ত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগ নেতারা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া ও গুলিবর্ষণ করছে। ছাত্রলীগের অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিতরা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে এখন এক মূর্তিমান আতংক। ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও সেই আগের রূপে দেখা যায় ছাত্রলীগকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বারবারই সংঘর্ষে অশান্ত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এসব ঘটনায় জড়িতরা হল অছাত্র, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী, দাগি খুনি, সংগঠন থেকে নানা অপরাধে বহিষ্কৃত নেতাকর্মী ও ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি ছাত্রলীগেরই এক পক্ষের কর্মীদের হামলায় আরেক পক্ষের দু’জন কর্মী নিহত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বরং উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে ওই হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসে। দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে কাউকে কাউকে বহিষ্কারও করা হলেও বহিষ্কৃত ওই নেতাকর্মীরা দলের অন্য নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলেমিশে কখনও সরাসরি, কখনও নেপথ্যে থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নিয়োগ-বাণিজ্য, ও হলের সিট দখল, যৌন হয়রানি, ছিনতাই, গ্র“পিং, সংঘর্ষ, অস্ত্রবাজি, পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ লোকজনকে মারধরসহ নানা অপকর্মে জড়িত রয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে প্রশাসনের মদদে মাঠে নামে ছাত্রলীগ নেতারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে তারা। আর এ হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের গুলি বর্ষণের ছবি রোববার থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও গণমাধ্যমে প্রচার হলেও পূর্বের ন্যায় একই কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে ঘুরেফিরে ছাত্রশিবিরকেই দায়ী করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত অস্ত্রধারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার ঘটনায় অন্তত ৪টি মামলা হলেও এতে চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের আসামি করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবিতে বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি হতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীদের সমাবেশে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিনা উসকানিতে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা একটি সাদা চাদর গলায় পেঁচিয়ে ডান হাতে একটি কালো পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তার বাম পাশে কালো শার্ট পরে হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরীকে। এর কয়েক সেকেন্ড পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কালো সোয়েটার-জ্যাকেট পরিহিত এক ছাত্রলীগ নেতা পিস্তলে গুলি ভরে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি গুলি ছোড়ে ছাত্রলীগের এই নেতা। একই সময়ে তার সামনে কালো জ্যাকেট পরিহিত সাদা পিস্তলে গুলি ভরতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতুকে। আর তার পেছনেই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু।

ছাত্রলীগের মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল হামলায় শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যায়। তারা আতংকে দিগি¦দিক ছুটতে থাকে। এ সময় আগে থেকেই অবস্থান নেয়া পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একযোগে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, ছররা গুলি ছোড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলাভবন দিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে দৌড়ে পালাতে দেখে তাদের অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় লাল টি-শার্ট পরে অনেক দূর থেকে গুলি ছোড়ে রাবি ছাত্রলীগ ক্যাডার আবদুস সালাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিচু তলা থেকে পুলিশের সামনেই কোমরের পেছনে রাখা একটি কালো পিস্তল বের করেন তিনি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস স্ট্যান্ডের আড়াল থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ ক্যাডার মোস্তাকিম বিল্লাহ, উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল গালিব, ছাত্রলীগ ক্যাডার ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পলাশকেও গুলি ছুড়তে দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালে বহিরাগত অছাত্র অনেককে ছাত্রলীগের সঙ্গে দেখা যায়। দিনভর ক্যাম্পাসে পুলিশ-ছাত্রলীগের গুলিতে ৩০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়। পরের দিন এসব অস্ত্রবাজরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে বেড়ালেও তাদের আটক করেনি পুলিশ প্রশাসন।

এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয় এর আগে বিগত দুই বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে এ ধরনের অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন।

২০১২ সালের ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিন, তৎকালীন কমিটির সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক জোবায়ের ইবনে তানিম, উপ-দফতর সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এছাড়াও একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে বা কোনো অনৈতিক কাজ করতে এসব অগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে আসছেন। পরীক্ষা কক্ষে বেঞ্চের ওপর অস্ত্র রেখে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দেয়ার অনেক অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়া করতে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা যায় এসব নেতাকে।

এদিকে গত বছরের ২৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মীর হাতে পুলিশের সামনে অগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। তারা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ওই দিন গুলিও ছোড়েন। এ সময় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান, পলাশ মাহমুদ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, সাহানুর ইসলাম শাকিল, নাসিম আহমেদ সেতু, আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক কমিটির গ্রন্থনা এবং পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ সেতু বিশ্বববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাড়ি রাজশাহীর বাঘা এলাকায়। তাকে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর শিবিরের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। সেতু রোববারও পিস্তলে গুলি ভরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করতে দেখা যায়। এই সেতু নিজ সংগঠনের কর্মী সোহেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এছাড়া সেতুর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল রাবি ছাত্রলীগের কর্মী আশরাফুল ইসলামকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সেতুসহ ছয়জনকে আসামি করে আশরাফুল বাদী হয়ে চারঘাট থানায় একটি মামলা করেন। এ প্রসঙ্গে জানার জন্য সেতুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সৈয়দ আমির আলী হলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে হলে চাঁদাবাজিসহ অনেক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তবে রোববারই প্রথমবারের মতো তাকে পিস্তল হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করতে দেখা গেছে। অস্ত্রসহ ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলে থাকার সময় ‘চাঁদাবাজ’ নামে পরিচিত ছিলেন ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাকিম বিল্লাহ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান করছেন। তিনি রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শিবিরের গুপ্তচর বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ্ হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক তুহিনের ঘনিষ্ঠ রানা নীলফামারী জেলার বাসিন্দা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার আগে পড়ালেখা করেছেন পাবনার কুখ্যাত রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মামলায় অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুস সোবহানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দারুল ইসলামিয়া মাদরাসায়। ওই মাদরাসার ট্রাস্টি ফান্ড হতে এখনও বৃত্তি পান বলে সূত্রে প্রকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রুনু। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে আবাসিক শিক্ষার্থী না হলেও ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে কক্ষ বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি। তার বাবা রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর মেয়র। রুনুর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে একাধিক চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে। অস্ত্র ব্যবহার ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবেই নিজেকে ভাবি। এর পরে ছাত্রলীগ নেতা। আমার বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন মিডিয়াতে যে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে তা সত্য নয়।


 

সাবমিট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

অস্ত্রবাজি ছিনতাই চাঁদাবাজি সব কিছুতেই ওরা

 যুগান্তর ডেস্ক 
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 

বুলবুল চৌধুরী/জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের আধিপত্য চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে সংগঠনটির কিছু চিহ্নিত নেতাকর্মী। অথচ তারা কখনও আটক বা গ্রেফতার হয় না। এ ছাত্র সংগঠনটির কিছু নেতার নৈতিক অধঃপতনের সুযোগে শিবিরকর্মীরা এদের ব্যবহার করছে এমন অভিযোগও উঠেছে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জামায়াত-শিবিরের মদদে ও গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছে। রোববার ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগঠিত সংঘর্ষ ও প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে সবচেয়ে বেশি দেশী ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র। এ সংঘর্ষে দশেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর প্রায় সবগুলোই ব্যবহার করেছে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই সংঘর্ষের ছবিগুলোতে এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ সংঘর্ষের দু’দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার হয়নি একটিও আগ্নেয়াস্ত্র বা গ্রেফতার হয়নি কোনো অস্ত্রধারী। ৮০-এর দশকে সর্বপ্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়। তবে তা ছিল দেশীয় পাইপ গান, পিস্তল ও শুটার গান। পরবর্তীতে দু’একটি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রও সে সময় ব্যবহৃত হলেও এত ব্যাপকসংখ্যক নয়, রোববারের ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংগঠিত সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসার পর গত ৬ বছর থেকে ক্যাম্পাসে বেড়েছে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নিয়োগ-বাণিজ্য ও হলের সিট দখল, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, অস্ত্রবাজি, পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ ছাত্রদের মারধরসহ নানা ধরনের অপরাধসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড। পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহতার দিকে গেছে যে তাতে বন্ধ করতে হয় রোববার বিশ্ববিদ্যালয়টি।

রোববারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্র ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, রোববারের সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর হাতে পিস্তল দেখা গেছে। এই গ্র“পটির উসকানিতেই ছাত্রলীগ বারবার অস্ত্রবাজিতে জড়াচ্ছে। ছাত্রলীগকে যেন কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না। একশ্রেণীর নেতার বেপরোয়া অস্ত্রবাজিতে অশান্ত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগ নেতারা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া ও গুলিবর্ষণ করছে। ছাত্রলীগের অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিতরা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে এখন এক মূর্তিমান আতংক। ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও সেই আগের রূপে দেখা যায় ছাত্রলীগকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বারবারই সংঘর্ষে অশান্ত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এসব ঘটনায় জড়িতরা হল অছাত্র, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী, দাগি খুনি, সংগঠন থেকে নানা অপরাধে বহিষ্কৃত নেতাকর্মী ও ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি ছাত্রলীগেরই এক পক্ষের কর্মীদের হামলায় আরেক পক্ষের দু’জন কর্মী নিহত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বরং উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে ওই হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসে। দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে কাউকে কাউকে বহিষ্কারও করা হলেও বহিষ্কৃত ওই নেতাকর্মীরা দলের অন্য নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলেমিশে কখনও সরাসরি, কখনও নেপথ্যে থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নিয়োগ-বাণিজ্য, ও হলের সিট দখল, যৌন হয়রানি, ছিনতাই, গ্র“পিং, সংঘর্ষ, অস্ত্রবাজি, পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ লোকজনকে মারধরসহ নানা অপকর্মে জড়িত রয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে প্রশাসনের মদদে মাঠে নামে ছাত্রলীগ নেতারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে তারা। আর এ হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের গুলি বর্ষণের ছবি রোববার থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও গণমাধ্যমে প্রচার হলেও পূর্বের ন্যায় একই কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে ঘুরেফিরে ছাত্রশিবিরকেই দায়ী করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত অস্ত্রধারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার ঘটনায় অন্তত ৪টি মামলা হলেও এতে চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের আসামি করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবিতে বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি হতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীদের সমাবেশে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিনা উসকানিতে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা একটি সাদা চাদর গলায় পেঁচিয়ে ডান হাতে একটি কালো পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তার বাম পাশে কালো শার্ট পরে হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরীকে। এর কয়েক সেকেন্ড পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কালো সোয়েটার-জ্যাকেট পরিহিত এক ছাত্রলীগ নেতা পিস্তলে গুলি ভরে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি গুলি ছোড়ে ছাত্রলীগের এই নেতা। একই সময়ে তার সামনে কালো জ্যাকেট পরিহিত সাদা পিস্তলে গুলি ভরতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতুকে। আর তার পেছনেই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু।

ছাত্রলীগের মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল হামলায় শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যায়। তারা আতংকে দিগি¦দিক ছুটতে থাকে। এ সময় আগে থেকেই অবস্থান নেয়া পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একযোগে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, ছররা গুলি ছোড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলাভবন দিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে দৌড়ে পালাতে দেখে তাদের অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় লাল টি-শার্ট পরে অনেক দূর থেকে গুলি ছোড়ে রাবি ছাত্রলীগ ক্যাডার আবদুস সালাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিচু তলা থেকে পুলিশের সামনেই কোমরের পেছনে রাখা একটি কালো পিস্তল বের করেন তিনি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস স্ট্যান্ডের আড়াল থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ ক্যাডার মোস্তাকিম বিল্লাহ, উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল গালিব, ছাত্রলীগ ক্যাডার ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পলাশকেও গুলি ছুড়তে দেখা যায়। সংঘর্ষ চলাকালে বহিরাগত অছাত্র অনেককে ছাত্রলীগের সঙ্গে দেখা যায়। দিনভর ক্যাম্পাসে পুলিশ-ছাত্রলীগের গুলিতে ৩০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়। পরের দিন এসব অস্ত্রবাজরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে বেড়ালেও তাদের আটক করেনি পুলিশ প্রশাসন।

এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয় এর আগে বিগত দুই বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে এ ধরনের অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন।

২০১২ সালের ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিন, তৎকালীন কমিটির সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক জোবায়ের ইবনে তানিম, উপ-দফতর সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এছাড়াও একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে বা কোনো অনৈতিক কাজ করতে এসব অগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে আসছেন। পরীক্ষা কক্ষে বেঞ্চের ওপর অস্ত্র রেখে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দেয়ার অনেক অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়া করতে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা যায় এসব নেতাকে।

এদিকে গত বছরের ২৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মীর হাতে পুলিশের সামনে অগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। তারা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ওই দিন গুলিও ছোড়েন। এ সময় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান, পলাশ মাহমুদ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, সাহানুর ইসলাম শাকিল, নাসিম আহমেদ সেতু, আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক কমিটির গ্রন্থনা এবং পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ সেতু বিশ্বববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাড়ি রাজশাহীর বাঘা এলাকায়। তাকে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর শিবিরের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। সেতু রোববারও পিস্তলে গুলি ভরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করতে দেখা যায়। এই সেতু নিজ সংগঠনের কর্মী সোহেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এছাড়া সেতুর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল রাবি ছাত্রলীগের কর্মী আশরাফুল ইসলামকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সেতুসহ ছয়জনকে আসামি করে আশরাফুল বাদী হয়ে চারঘাট থানায় একটি মামলা করেন। এ প্রসঙ্গে জানার জন্য সেতুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সৈয়দ আমির আলী হলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে হলে চাঁদাবাজিসহ অনেক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তবে রোববারই প্রথমবারের মতো তাকে পিস্তল হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করতে দেখা গেছে। অস্ত্রসহ ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলে থাকার সময় ‘চাঁদাবাজ’ নামে পরিচিত ছিলেন ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাকিম বিল্লাহ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান করছেন। তিনি রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শিবিরের গুপ্তচর বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ্ হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক তুহিনের ঘনিষ্ঠ রানা নীলফামারী জেলার বাসিন্দা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার আগে পড়ালেখা করেছেন পাবনার কুখ্যাত রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মামলায় অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুস সোবহানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দারুল ইসলামিয়া মাদরাসায়। ওই মাদরাসার ট্রাস্টি ফান্ড হতে এখনও বৃত্তি পান বলে সূত্রে প্রকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রুনু। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে আবাসিক শিক্ষার্থী না হলেও ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে কক্ষ বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি। তার বাবা রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর মেয়র। রুনুর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে একাধিক চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে। অস্ত্র ব্যবহার ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবেই নিজেকে ভাবি। এর পরে ছাত্রলীগ নেতা। আমার বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন মিডিয়াতে যে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে তা সত্য নয়।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র