jugantor
ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ নামধারী ইন্টার্নি চিকিৎসকদের তাণ্ডব

  ময়মনসিংহ ব্যুরো  

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর পর স্বজনদের তালাবদ্ধ করে লাশের পাশেই দেড় ঘণ্টা বেধরক পেটালেন ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। স্বজনদের অপরাধ, ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন মুমূর্ষু রোগীকে কেন যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডে নেশাগ্রস্ত ইন্টার্নিরা পিটিয়েছেন চারজন টেলিভিশন সাংবাদিককেও। ভাংচুর ও ছিনিয়ে নিয়েছেন তাদের ক্যামেরা। এরপরও ক্ষান্ত হননি তারা। দূরদূরান্ত থেকে আসা জরুরি বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে গেটে ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে তালা ঝুলিয়ে দেন। ছাত্রলীগ নামধারী কিছু উচ্ছৃংখল ইন্টার্নি চিকিৎসকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে পুলিশ, বিএমএ ও স্বাচিপ নেতাসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মায়ের পাশ থেকে এক সন্তানকে পুলিশি জিম্মায় রেখে মরদেহ ও স্বজনরা ছাড়া পায় দীর্ঘ বৈঠকের পর। তাদের লোমহর্ষক এসব কাহিনী হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতংক দেখা দেয় রোগী ও স্বজনদের মাঝে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহরের গোলপুকুর পাড় এলাকার ক্যান্সারে আক্রান্ত এক রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। রাত ১০টার দিকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। বারবার কর্তব্যরত ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ডাকলেও তারা আসেননি, অশ্লীল ভিডিও দেখছিলেন মোবাইল ফোনে। একপর্যায়ে রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মায়ের মৃত্যুতে পাথর এক সন্তান তখন ওই চিকিৎসককে ডেকে জানান, আপনি ভিডিও দেখেন, আমার মা আর বেঁচে নেই। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে ওই ইন্টার্নি চিকিৎসক তার সহকর্মীদের খবর দিলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ নামধারী ডা. অরিজন, ডা. তমাল, ডা. বিকাশসহ ৩০/৪০ জন লাঠিসোটা ও রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লাশের পাশে ক্রন্দনরত রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে একটি কক্ষে মহিলাসহ স্বজনদের তালাবন্ধ করে বেধড়ক পেটায়। এ খবর পুরো হাসপাতাল ও শহরে ছড়িয়ে পড়লে সংবাদ সংগ্রহের জন্য একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি আতাউর রহমান জুয়েল, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের হোসাইন শাহীদ, জিটিভির কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা মুন্না, চ্যানেল ৯-এর রিপন গোয়ালা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে পৌঁছলে তাদের মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ খবরে ময়মনসিংহের সাংবাদিক নেতারা ও কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান এবং জরুরি বিভিাগের সামনে অবস্থান নেন। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইন্টার্নিদের এমন মারমুখী আচরণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি সাংবাদিকরা। সাংবাদিক নেতারা বিষয়টি তাৎক্ষণিক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, পুলিশ সুপার মঈনুল হককে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ধর্মমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তার এপিএস শফিক আহমেদকে হাসপাতালে ডেকে পাঠালেও কোনো সুরাহা ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিএমএ জেলা শাখার সেক্রেটারি ডা. মতিউর রহমান ভূইয়া, ওসি গোলাম সারোয়ার ও ধর্মমন্ত্রীর এপিএস প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সমবেদনা জানান এবং চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন জরুরি বৈঠকে বসে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়।

ময়মনসিংহ শহরে নিন্দা বিক্ষোভ ও সমাবেশ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহকালে ইন্টার্নি ডাক্তার কর্তৃক সাংবাদিকদের মারধর ও ক্যামেরা ছিনতাইয়ের প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচার দাবিতে বুধবার ময়মনসিংহ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। সাংবাদিক নেতারা সমাবেশে বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে দোষী ইন্টার্নি ডাক্তারদের বিচার ও ছিনতাইকৃত চারটি ক্যামেরা ফেরত প্রদান না করা হলে ৩ মার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন, ময়মনসিংহ রিপোর্টার্স ইউনিটি, ময়মনসিংহ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, সাংবাদিক বহুমুখী সমবায় সমিতি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি ময়মনসিংহ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।


 

সাবমিট

ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ নামধারী ইন্টার্নি চিকিৎসকদের তাণ্ডব

 ময়মনসিংহ ব্যুরো 
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর পর স্বজনদের তালাবদ্ধ করে লাশের পাশেই দেড় ঘণ্টা বেধরক পেটালেন ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। স্বজনদের অপরাধ, ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন মুমূর্ষু রোগীকে কেন যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডে নেশাগ্রস্ত ইন্টার্নিরা পিটিয়েছেন চারজন টেলিভিশন সাংবাদিককেও। ভাংচুর ও ছিনিয়ে নিয়েছেন তাদের ক্যামেরা। এরপরও ক্ষান্ত হননি তারা। দূরদূরান্ত থেকে আসা জরুরি বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে গেটে ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে তালা ঝুলিয়ে দেন। ছাত্রলীগ নামধারী কিছু উচ্ছৃংখল ইন্টার্নি চিকিৎসকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে পুলিশ, বিএমএ ও স্বাচিপ নেতাসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মায়ের পাশ থেকে এক সন্তানকে পুলিশি জিম্মায় রেখে মরদেহ ও স্বজনরা ছাড়া পায় দীর্ঘ বৈঠকের পর। তাদের লোমহর্ষক এসব কাহিনী হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতংক দেখা দেয় রোগী ও স্বজনদের মাঝে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহরের গোলপুকুর পাড় এলাকার ক্যান্সারে আক্রান্ত এক রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। রাত ১০টার দিকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। বারবার কর্তব্যরত ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ডাকলেও তারা আসেননি, অশ্লীল ভিডিও দেখছিলেন মোবাইল ফোনে। একপর্যায়ে রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মায়ের মৃত্যুতে পাথর এক সন্তান তখন ওই চিকিৎসককে ডেকে জানান, আপনি ভিডিও দেখেন, আমার মা আর বেঁচে নেই। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে ওই ইন্টার্নি চিকিৎসক তার সহকর্মীদের খবর দিলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ নামধারী ডা. অরিজন, ডা. তমাল, ডা. বিকাশসহ ৩০/৪০ জন লাঠিসোটা ও রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লাশের পাশে ক্রন্দনরত রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে একটি কক্ষে মহিলাসহ স্বজনদের তালাবন্ধ করে বেধড়ক পেটায়। এ খবর পুরো হাসপাতাল ও শহরে ছড়িয়ে পড়লে সংবাদ সংগ্রহের জন্য একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি আতাউর রহমান জুয়েল, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের হোসাইন শাহীদ, জিটিভির কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা মুন্না, চ্যানেল ৯-এর রিপন গোয়ালা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে পৌঁছলে তাদের মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ খবরে ময়মনসিংহের সাংবাদিক নেতারা ও কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান এবং জরুরি বিভিাগের সামনে অবস্থান নেন। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইন্টার্নিদের এমন মারমুখী আচরণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি সাংবাদিকরা। সাংবাদিক নেতারা বিষয়টি তাৎক্ষণিক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, পুলিশ সুপার মঈনুল হককে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ধর্মমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তার এপিএস শফিক আহমেদকে হাসপাতালে ডেকে পাঠালেও কোনো সুরাহা ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিএমএ জেলা শাখার সেক্রেটারি ডা. মতিউর রহমান ভূইয়া, ওসি গোলাম সারোয়ার ও ধর্মমন্ত্রীর এপিএস প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সমবেদনা জানান এবং চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন জরুরি বৈঠকে বসে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়।

ময়মনসিংহ শহরে নিন্দা বিক্ষোভ ও সমাবেশ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহকালে ইন্টার্নি ডাক্তার কর্তৃক সাংবাদিকদের মারধর ও ক্যামেরা ছিনতাইয়ের প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচার দাবিতে বুধবার ময়মনসিংহ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। সাংবাদিক নেতারা সমাবেশে বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে দোষী ইন্টার্নি ডাক্তারদের বিচার ও ছিনতাইকৃত চারটি ক্যামেরা ফেরত প্রদান না করা হলে ৩ মার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন, ময়মনসিংহ রিপোর্টার্স ইউনিটি, ময়মনসিংহ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, সাংবাদিক বহুমুখী সমবায় সমিতি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি ময়মনসিংহ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র