রম্যগল্প

বাজার নিয়ে যত ক্যাচাল

 জান্নাতুল ইভা 
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

‘তুমি একটা বেগুন। যার মধ্যে কোনো গুণ নাই তাকে বেগুন বলে।’ রান্নাঘরে বসে বেগুন কাটতে কাটতে ইফতিকে কথাটা বললাম। ইফতি খবরের কাগজে মুখ গুঁজে খবর পড়ছিল।

কাগজটা সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বেগুন কিন্তু রান্না করে খাওয়া যায়। মাত্রই তুমি বেগুনগুলো কেটেকুটে রান্না করার জন্য রেডি করছিলে। যা তৃপ্তি করে খাওয়ার পর পেটের খিদে মেটে তার সঙ্গে আমার গুণ না থাকার সম্পর্ক কী?’

‘এবার তুমিই বুঝো যে তুমি কত বড় বেগুন। উল্টো তরকারিটার সঙ্গে তোমার তুলনা করে তরকারির অপমান করলাম আমি। আমারই ভুল।’

‘স্বামীদের উপর চলছে অত্যাচার। আর কত? আর কত স্বামী মুখ বুঝে সইবে, করবে হাহাকার!’

আমি রাগি চোখে ইফতির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কী বললা তুমি?’

‘খবরের কাগজগুলো কবে থেকে এত সুন্দর খবর ছাপাতে শুরু করল? ভাবছি আমিও কিছু একটা লিখব। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে দিনরাত আমার সঙ্গে ঝগড়া কর। এবার এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব আমি। পত্রিকায় ছাপা হবে আমার উপর অত্যাচার হওয়ার সব গল্প। লোকজন জানবে ঘরে ঘরে ইফতিদের কী বেহাল অবস্থা!’

আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ, যেই পত্রিকায় মুখ গুঁজে বসে আছ আমি সেখানকার কন্টেন্ট রাইটার। আমিও লিখতে জানি। শুক্রবারেও যেসব স্বামীরা বাজার না করে পড়ে পড়ে ঘুমায় তাদের নিয়েই ছাপা হবে আমার পরবর্তী গল্প। কীভাবে সেসব স্বামীদের টাইট দিতে হবে সেই ট্রিকস শেখাব সবাইকে। এখন উঠে বাজারে যাবা। সপ্তাহের ছয়দিন আমি বাজার করি। ছুটির দিনটায় একটু বাজার করলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে শুনি?’

ইফতি আমতা আমতা করে বলল, ‘আজকের দিনটা তুমি করে নাও, এরপর থেকে ছুটির দিনে আমিই বাজার করব।’

‘ঠিক তো?’

সে হেসে বলল, ‘একদম।’

কিন্তু না, আমার এই ঠ্যাডা বর আমাকে বাজার করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শেষে আমাকে দিয়েই বাজার করিয়ে নিচ্ছে ছুটির দিনেও। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বললাম, ‘এ কেমন জীবন? একে কি বিবাহিত জীবন বলে! এটা তো সিঙ্গেল লাইফ। অথচ যখন সিঙ্গেল ছিলাম তখনো আমার এত খাটতে হয়নি। আর এখন নামে ম্যারিড কামে জরিনা বুয়া হয়ে বসে আছি। আজ থেকে আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলব, আই এম নট ম্যারিড। একদম বিশুদ্ধ সিঙ্গেল মেয়েদের মতো জীবন কাটাব। ছেলেরা আবারও আমার প্রেমে পড়বে। যদিও এখনো আমি বাইরে গেলে রোজ তিন, চারটে করে প্রপোজাল পাই। ভাবছি এরপর থেকে নিজের নামের সঙ্গে তোমার নামের টাইটেলটাও বদলে ফেলব। কেউ জিজ্ঞেস করলে শুধু নিজের নামই বলব। আর সবচেয়ে বড় কথা আজ থেকে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সব আইডিতে সিঙ্গেল স্ট্যাটাস দিব। আহ! জীবন কত সুন্দর!’

কথাগুলো বলে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ইফতি রেডি হয়ে কোথাও বেরোচ্ছে। অবাক হয়ে বললাম, ‘সারা বছর ছুটির দিনে যে টিকটিকির মতো সারাক্ষণ বিছানার সঙ্গে লেগে থাকে সে আজ কোথায় যাচ্ছে? সূর্য আজ কোনদিকে উঠল!’

ইফতি আড় চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ব্যাগ দাও, বাজার করতে যাব। আর হ্যাঁ, এখন থেকে প্রতি শুক্রবার আমিই বাজার করব। সিঙ্গেল সেজে ঢং করতে হবে না।’

অতঃপর ইফতি ব্যাগ হাতে বাজার করতে চলে গেল। আর আমি মুচকি হেসে মনে মনে বললাম, ‘তুমি যদি বুনো ওল হও আমিও তবে বাঘা তেঁতুল।’

বিয়ের পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন দেখলাম, ইফতি পুরোনো একটা পত্রিকায় মুখ গুঁজে বসে আছে। মনে হচ্ছে পুরোনো বইপত্তরগুলো ঘাঁটতে গিয়ে এ খবরের কাগজটা বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু এত পুরোনো একটা খবরের কাগজে মুখ গুঁজে কী এমন পড়ছে সে!

অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত মনোযোগ দিয়ে কী পড়ছ? তাও আবার আগের পুরোনো পেপার।’ সে প্রচণ্ড রাগি স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তার মানে আমাকে বাজার করানোর জন্য সবটাই তোমার নাটক ছিল? পাঁচ বছর ধরে ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে দিয়ে ছুটির দিনে বাজার করিয়ে নিচ্ছ?’

আমি কিছু বুঝতে না পেরে ইফতির হাত থেকে খবরের কাগজটা টেনে নিয়ে বললাম, ‘কী বলছ, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’ কাগজে চোখ বুলাতেই দেখলাম, ইফতিকে দিয়ে বাজার করানোর যেই ট্রিকসের লেখাটা কন্টেন্ট আকারে পাঁচ বছর আগে পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল, সেটাই এতক্ষণ ধরে ইফতি মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন