চাকরি থেকে অবসরের পরও সিবিএ দখলের পাঁয়তারা

মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা * ৫ জনকে চিনি শিল্প ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
 কায়েস আহমেদ সেলিম 
২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও আবু বিন মোস্তানজিদ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে প্রভাব বিস্তারের পাঁয়তারা করছেন।

সিবিএ’র নেতৃত্ব পাওয়ার আশায় সাবেক এই কর্মকর্তা বর্তমান নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েও নানা ধরনের অভিযোগ আছে। তিনি এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভিড়ে যান। এছাড়া তার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি চক্র চিনি শিল্পে প্রবেশ করে ক্ষমতার দম্ভ, পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ নানাভাবে পরিবেশের অবনতি ঘটনানোর চেষ্টা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি ২০১৮ সালে মো. আবু বিন মোস্তানজিদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চিনি শিল্প ভবনে সরাসরি প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সিবিএ’র সঙ্গে জড়িত অনেকেই জানান, মোস্তানজিদ ২০০৩ সালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কেন্দ্রীয় শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করে। পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক লীগের সহসভাপতি পদও পেয়ে যান। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছেন। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরও তিনি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান সিবিএ সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের জন্য শ্রম আইন আছে। এতে বলা আছে প্রতি ১১ জনের কমিটিতে ১ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী থাকতে পারবেন। আর ২১ জনের কমিটি হলে ২ জন থাকতে পারবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের এখানে ৫ জনের কমিটি। কাজেই এখানে অবসরপ্রাপ্ত কারও থাকার সুযোগ নেই। এমনকি তিনি ভোটও দিতে পারবেন না। আমরা নিয়মের বাইরে যেতে পারি না।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১১ সালে অফিস সহকারী পদে কর্মরত অবস্থায় তিনি চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন। মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখিয়ে তিনি এ আবেদন করেন। এ কিন্তু সে সময় সিবিএ’র অনেক নেতা এর বিরোধিতা করেন। একই সঙ্গে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বরাবর মোস্তানজিদের বিভিন্ন অপকর্মের বিষয় (নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া) উল্লেখ করে চিঠিও দেওয়া হয়। সে সময় তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান। চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সময়ই তার মুক্তিযোদ্ধার সনদের বিষয়টি সামনে আসে।

আবু বিন মোস্তানজিদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম তারেক খান। তিনি সেখানে বলেন, আবু বিন মোস্তানজিদ ১৯৭৭ সালে চাকরিতে প্রবেশ করেন। তখন তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

পরে ২০১৩ সালে গেজেট নং-১৬৭২ ও সাময়িক সনদ নম্বর ম-১৯৫০৯৭ কর্মস্থলে জমা দিয়ে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন। সনদের বিষয়টি চিনি শিল্প করপোরেশনের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠালে, মন্ত্রণালয়ের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি চিনি শিল্প করপোরেশন।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক ড. মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল বলেন, জামুকা ২০১৪ সালে সর্বশেষ গেজেটের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় যদি নাম থাকে তবে সেক্ষেত্রে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না। এরপরও যদি কেউ মনে করেন সমস্যা আছে তবে জামুকার চেয়ারম্যান বরাবর একজন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ দিতে পারবেন এবং সেই প্রেক্ষিতে মাননীয় মন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী আবু বিন মোস্তানজিত যুগান্তরকে বলেন, আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নই। আমার বিরুদ্ধে অফিসের কিছু লোকজন এসব মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।

বর্তমান চিনি শিল্পের সিবিএ সভাপতি খোরশেদ ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। তার চাকরি বাঁচানোর লক্ষে আমার বিরুদ্ধে সে বিভিন্ন অপপ্রচার করছে। অফিসে প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অনেক আগের কথা, এখন আর ওই আদেশের কোনো মূল্য নেই। কিন্তু এখনও তো চিনি শিল্প ভবনে এমন আদেশের কপি ঝোলানো রয়েছে, এ বিষয়ে তিনি পাশ কেটে যান। তবে, তিনি তার সব দুর্নীতি থেকে মুক্ত বলেও দাবি করেন।

২০১৮ সালে ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক (সিঅ্যান্ডসিএস) মো. আনোয়ার হোসেন খান স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে মো. আবু বিন মোস্তানজিদসহ ৫ জনের চিনিশিল্প ভবনে সরাসরি প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি এ পদে যোগদানের আগের বিষয়। তবে আমি কাউকে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেইনি। এ নামের কোনো কর্মচারীকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনিও না।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন