আল্লামা শফীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো আয়োজন নেই হেফাজতের

 আবু তালেব, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:০৩ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
আল্লামা শফীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো আয়োজন নেই হেফাজতের
আল্লামা শাহ আহমদ শফী। ফাইল ছবি

হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি।

এর একদিন আগে আগে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল্লামা শফী পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী এবং তার অনুসারীদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ তুলে মাদ্রাসার কিছু ছাত্র আল্লামা শফীকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে।  দুই দিনের বিক্ষোভের পর ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির সভায় মাদ্রাসার পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় তাকে। 

তবে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর মাওলানা আনাস ও তার অনুসারীরা গত এক বছরে হেফাজত ইসলাম এবং হাটহাজারী মাদ্রাসায় আর সুবিধা করতে পারেনি বলে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ বর্তমান কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কেন্দ্রীয় এক হেফাজত নেতা জানান, মৃত্যুর এক বছর যেতে না যেতেই হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে গেছে প্রয়াত আল্লামা শফীর অনুসারীদের। একই সঙ্গে তার নিজ হাতে গড়া সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশেও তিনি উপেক্ষিত। এ কারণে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে আজ শনিবার তার দল কিংবা মাদ্রাসায় বিশেষ কোনো দোয়া অনুষ্ঠান হচ্ছে না, অন্য কোনোভাবেও স্মরণ করা হচ্ছে না তাকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে সঙ্গবদ্ধ করে ২০১০ সালে আত্মপ্রকাশ করে দেশের ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, আল্লামা শফীর নেতৃত্বের কারণেই মূলত হেফাজত দেশে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। 

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় বৃহত্তম সমাবেশ ও রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে লাগাতার অবস্থান করে ঢাকা তথা দেশ অচল করার চেষ্টাও হয়েছিল তার নেতৃত্বকে সামনে রেখে। পরবর্তীতে সরকার বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়ের কৌশল নেন আল্লামা শফী। 

কিন্তু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে হেফাজতের ভেতরেই আরেকটি পক্ষ শফীবিরোধী অবস্থান নেন।  কওমি স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত শুকরানা মাহফিল নিয়ে তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলয়ের সঙ্গে এ দ্বিধাবিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।  

অন্যদিকে ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর নানা অনিয়মের অভিযোগ আর দল ও হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ছেলেকে সমর্থনের কারণেও অনেক কট্টর অনুসারী ধীরে ধীরে আল্লামা শফীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। এ কারণে প্রথমে ছেলে এবং পরে বাবা আল্লামা শফীকেও ছাড়তে হয় মাদ্রাসা ও দলের নিয়ন্ত্রণ।  নানা ঘাত–প্রতিঘাতে দলে শফীর ভিন্নমতাবলম্বীরা শক্তিশালি হয়ে ওঠে। 

হাটহাজারী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা ইয়াহইয়া’র কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আহমদ শফীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কিছু করা হচ্ছে না। অতীতেও মহাপরিচালক মৃত্যুর পর কোনো দোয়া হয়নি।  এগুলো শরীয়ত সম্মত নয়।

আল্লামা শফীর ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী জানান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা শফীর মাগফেরাত কামনায় তার খলিফা, শাগরেদ, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনরা সাড়ে তিন হাজার কোরআন খতম, বিশটি বোখারী খতম, চার হাজার খতমে ইউনুস দুই লাখ বিশ হাজার দরুদ শরিফ খতম ও পাঁচশতবার সুরা ইয়াসিন খতম সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া শুক্রবার দেশের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর শাইখুল ইসলামের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

উল্লেখ্য, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের অগ্রদূত শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর (রহ.) অন্যতম খলিফা। 

বাংলাদেশর ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদীন। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমীয়া বাংলাদেশ ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক এবং বহুল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর হিসেব দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে শুধুমাত্র এরকম দু-চারটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা আমীর হিসেবে পরিচয় করে দেয়া হবে মারাত্মক ভুল বরং তিনি ছিলেন- এদেশের লক্ষ কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু।  

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

ঘটনাপ্রবাহ : আল্লামা শফী আর নেই