বিআইডিএসর গবেষণা

চালের দাম বাড়লে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ কমে যায়

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
১০ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

চালের দাম বাড়লে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে গরিব মানুষ শুধু সবজিনির্ভর হয়ে পড়ে।

এই শ্রেণির মানুষ তাদের আয়ের ৩২ শতাংশ খরচ করে শুধু চাল কেনার পেছনে। নিু আয়ের মানুষের কাছে বিলাসী খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয় মাছ, মাংস ও ফল। আয় কমলে সবার আগে এসব খাবার কেনা বন্ধ অথবা কমিয়ে দেয় তারা।

ফলে মারাত্মক পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা বেড়ে যায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় ওঠে এসেছে এসব তথ্য। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বিআইডিএস সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে ‘হোয়াট ডু উই লার্ন এ্যাবাউট হাউজহোল্ড ফুড ডিমাইন্ড প্যাটেন্টস অ্যান্ড ইলাস্টিসিটিস ফ্রম মাইক্রো-ডাটা ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ড. ওয়াসেল বিন সাদাত। এটি তৈরি করা হয়েছে দ্য কুয়াইডস মডেলে বিবিএসর ২০১৬ সালের হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে। এটি পুরোনো তথ্যেও ভিত্তিতে করা হলেও এখনো প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূল প্রবন্ধে ড. সাদাত বলেন, গ্রামের মনুষ শহরের মানুষের চেয়ে বেশি ব্যয় করে চালের পেছনে। গ্রামের মানুষ নিজের মোট আয়ের ৩২ শতাংশ ব্যয় করে চাল কেনায়। আবার গরিব মানুষ ধনীদের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে চাল কিনতে। গ্রাম ও শহর উভয় এলাকার গরিব মানুষের কাছে লাক্সারিয়াস বা বিলাসী খাদ্য পণ্য হিসাবে পরিগণিত হয় মাংস, মাছ ও ফল। তবে ডিম সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য খাবার। মাংস কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে শহরের মানুষ। ফল কেনায় এগিয়ে ধনীরা। শাক ও সবজি কেনার ক্ষেত্রে গ্রাম শহর সব জায়গায়ই প্রায় সমান। দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে কম ব্যয় করে ফল ও পুষ্টিকর খাবারের পেছনে। তবে পরিবার প্রধান যদি নারী হন তাহলে কিছুটা পুষ্টিকর খাবারে গুরুত্ব থাকে। সেই সঙ্গে বিড়ি, সিগারেট, পান, জর্দ্দা কিংবা অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ কম হয়। তবে মানুষের যদি ১০ শতাংশ আয় বাড়ে তাহলে ১৫ শতাংশ ভোগ বেড়ে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি চালের দাম বাড়ে তাহলে জাতীয়ভাবে ডালজাতীয় খাবার, মাছ, মাংস ফল এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্যেও ভোগ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে শুধু শাক-সবজি কিনে থাকে দরিদ্র মানুষেরা। যদি ডাল জাতীয় খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় তাহলে অন্যান্য খাদ্য-পণ্য এবং মাছের ভোগ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে বেড়ে যায় চাল, ডিম এবং সবজি ক্রয়ের পরিমাণ। মাছের দাম বাড়লে চাল, মাংস, সবজি এবং অন্যান্য খাদ্যের ভোগ কমে যায়। অন্যদিকে বেড়ে যায় ফল এবং ডাল জাতীয় খাদ্য ক্রয়। ডিমের দাম বাড়লে মাছ ও মাংসের ভোগ কমে যায়, বেড়ে যায় চাল, অন্যান্য খাদ্য, ডাল জাতীয় খাদ্য, সবজি এবং ফলের ভোগ। সবজির দাম বাড়লে চাল, ডিম, মাংস এবং ফলের ভোগ কমে। বেড়ে যায় অন্যান্য খাদ্য পণ্য, ডাল ও মাছের ভোগ। ফলের দাম বাড়লে চাল, ডাল, সবজি এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্যের ভোগ কমে যায়, বেড়ে যায় মাছ ও মাংসের ভোগ।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, গরিব মানুষ চালনির্ভর থাকে। কারণ তাদের আয় কম থাকে। দাম বাড়লে ডিমের ভোগ ঠিক থাকলেও মাছ, মাংস, ফল এবং সবজির ভোগ কমিয়ে দেয় তারা। এটা জাতিগতভাবে আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। গবেষণাটি পুরোনো তথ্য দিয়ে করা হলেও এখনো এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা আছে। তবে এই অবস্থার সঙ্গে দেখা দরকার ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালের অভ্যাস বা খাদ্যগ্রহণের অবস্থা কেমন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনা মহামারির প্রথম লকডাউনের সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। এ সময় জাতীয়ভাবে আয় কমে যায় ৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় লকডাউনের সময় পণ্য মূল্য বেড়ে যায় ২০ শতাংশ। সেই সঙ্গে আয় পুনরুদ্ধার হয়ে ৪৩ শতাংশ কম থাকে। তৃতীয় লকডাউনের সময় পণ্য মূল্য বেড়ে যায় ১৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে আয় পুনঃরুদ্ধারের ধারা অব্যাহত থাকে। আয় কম হয় ৪ শতাংশ।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, যেহেতু চালের দাম বাড়লে গরিব মানুষের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ বাদ দেয় সেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি খোলা বাজারে চাল বিক্রি বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া যখন আয় কমে যাবে তখন আয়বর্ধক কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন