নাগরিকদের উন্নত সুবিধা দিতে কাজ করছি: ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র

 এসএম শহীদ, মধুপুর (টাঙ্গাইল) 
১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত ও রাজা ধনপতি সিংহের একসময়কার রাজধানী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী। মধুপুর উপজেলার দ্বিতীয় পৌরসভা হিসেবে এর যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট। ২০১১ সালের ২৬ মে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয় এটি।

২৪.৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ধনবাড়ী পৌরসভায় প্রায় ৪০ হাজার নাগরিকের বাস। ভোটার ২৮ হাজার ৪৫৮ জন, এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৮১০ জন এবং নারী ১৪ হাজার ৬৪৮ জন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির প্রার্থী এসএমএ সোবাহানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠার দুই দশকে ধনবাড়ী পৌরসভার অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে অনেক কিছু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন তেমন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে শহরের অনেক জায়গায় পানি জমে যায়। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই, বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুত উদ্যোগ থমকে আছে।

তারা জানান, অনেক উন্নয়ন কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। এতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। তাছাড়া সড়ক ১০ ফুট প্রশস্ত হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৮ ফুট।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান) বদিউল আলম মঞ্জু বলেন, শহরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি মার্কেট তৈরি হলেও তা পড়ে আছে। ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে মার্কেটে পজিশন পাওয়ার আশায় দিন গুনতে গুনতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকে চড়া সুদে ঋণ করেছিলেন। তারা এখন সুদের বোঝা বয়ে নিঃস্ব প্রায়। মেয়রের ব্যর্থতার এটি বড় উদাহরণ।

পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এসএমএ সোবাহান বলেন, এখন পৌরসভার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে দুই শতাধিক পৌর ঠিকাদারের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। পৌর পরিষদের সংশ্লিষ্টরাই নামে-বেনামে কাজ করেন। ঠিকাদাররা কাজ না পেয়ে লাইসেন্স নবায়নে আগ্রহ হারিয়েছেন।

এসব বিষয় নিয়ে মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন একান্ত সাক্ষাৎকারে যুগান্তরকে বলেন, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া দুটি পৌর মার্কেট এখন চালুর অপেক্ষায়। অফিসিয়াল প্রসিডিউর ও বিদ্যুতের সংযোগ পেতে ঝামেলা ছিল। তাই এতদিন এ দুটি মার্কেট চালু করা সম্ভব হয়নি। এসব ঝামেলা কেটে গেছে, আশা করছি শিগগিরই চালু করতে পারব।

তিনি বলেন, প্রথম মেয়াদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৌর কবরস্থান হয়েছে। দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকা শহর এলাকায় সড়ক বাতি, পাবলিক টয়লেট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি, বাসস্ট্যান্ড প্রশস্তকরণ, শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ হয়েছে। মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মামলাবাজি মুক্ত রেখে শহরের আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠু রাখতে চেষ্টা করছি। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশুদ্ধ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথম মেয়াদে শুরু করা অসম্পন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলো সমাপ্ত করে ঐতিহ্যের ধনবাড়ীকে আধুনিক ও উন্নত ধনবাড়ী করার ব্রত নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।

মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, জায়গা এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ ইচ্ছা থাকলেও করা যাচ্ছে না। নিজস্ব আয়ে চলা পৌর পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাকি থাকে। তারপরও নাগরিকদের উন্নত সুবিধা দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক বাতি স্থাপন এখনও বাকি আছে। ডাম্পিং প্লেস না থাকায় অস্থায়ী জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে, পশুর হাটও বসানো হয়েছে ভাড়া জায়গায়। জায়গার অভাবে বাস টার্মিনাল করা যাচ্ছে না। অডিটোরিয়াম, পৌর পার্কও করা যায়নি। তবুও আগামী সাত-আট মাসের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্নে আশাবাদী।

ধনবাড়ী পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত বলে দাবি করেন মেয়র তপন। তবে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। মেয়র বলেন, শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিস্তারে তার পৌর পরিষদ ভূমিকা রাখছে। দরিদ্র মেধাবীদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়। পৌরসীমায় নদী নেই। দুই কিমি. দূরে একমাত্র খালে একটি মাস্টার ড্রেনের মাধ্যমে পৌর এলাকার পানি নিষ্কাশন হতে একটু সময় লাগে।

ফুপাতো ভাই কৃষিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং আ’লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডে নিজেকে সহায়ক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন মেয়র তপন। তিনি বলেন, পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো জনগণ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এর আগে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছি।

এবারও পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটি ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৌরসভাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। ধনবাড়ীবাসী তাকে ভুল বুঝবেন না বলে তার বিশ্বাস। জনগণের দোয়া সমর্থন এবং মন্ত্রী পাশে থাকলে বাকি সময়ের মধ্যে অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন